Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ওদের আমি চিনি: সোমা

শুক্রবার চাকদহের পালপাড়ায় কেবিএম এলাকার বাড়িতে বসে এমনটাই দাবি করলেন শান্তনু শীল খুনে ধৃত অমন রায় ওরফে কালুর মা রুনু রায়।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

সৌমিত্র সিকদার
চাকদহ শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৩
Share: Save:

তিনিই হুগলির চুঁচুড়ায় গিয়ে ছেলেকে ধরা দিতে বলেছিলেন। তা না হলে পুলিশ কেন, কারওরই সাধ্য ছিল না যে তাকে ধরে।

শুক্রবার চাকদহের পালপাড়ায় কেবিএম এলাকার বাড়িতে বসে এমনটাই দাবি করলেন শান্তনু শীল খুনে ধৃত অমন রায় ওরফে কালুর মা রুনু রায়। তাঁর বড় ছেলে সুমন রায় ওরফে হাম্পির নামও আছে পুলিশে দায়ের হওয়া অভিযোগে। সে ফেরার। তবে মায়ের দাবি, সে নির্দোষ।

রবিবার রাতে কেবিএম এলাকায় জলসার মঞ্চেই শান্তনুকে গুলি করে কালু। তাকে আড়াল করার উপায়ই ছিল না কারও। কিন্তু তার সঙ্গে যারা ছিল বলে অভিযোগ, তাদের সকলকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির লোকজন। পরের দিনই পাঁচ জনের নামে চাকদহ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন শান্তনুর স্ত্রী সোমা রায়। কিন্তু কালু ছাড়া আর এক জনকেও শুক্রবার রাত পর্যন্ত পুলিশ ধরতে পারেনি।

রুনু রায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘হাম্পি সে দিন জলসায় ছিল না।” হাম্পির স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার দাবি, “আমার স্বামী পাঁচ দিন ধরে এলাকায় নেই। শান্তনুবাবুর স্ত্রী আমাদের পরিচিত। তাঁকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করানো হয়েছে।” মামলায় নাম রয়েছে কেবিএম এলাকারই বাসিন্দা বিশ্বনাথ দেবনাথের। গত নভেম্বরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর গোলমাল থামাতে গেলে পুলিশ পিটিয়ে তাদের গাড়ি ভাঙচুর করার মামলাতেও তার নাম ছিল। তার স্ত্রী সুজাতার দাবি, ‘‘ওই ঘটনার পর থেকেই ও এলাকাছাড়া। জলসায় যাবে কী করে?’’ বৃহস্পতিবার রাতেও পুলিশ তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিল। সুজাতা বলেছেন, স্বামী কোথায় তা তাঁর জানা নেই।

ঘটনার পরের দিন, সোমবার আর এক অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ ঘোষ ওরফে ছ্যাঁকা বিশুর মেয়ের বিয়ের ‘পাকা কথা’ হওয়ার ব্যাপার ছিল। তার স্ত্রী ঝুমা ঘোষের দাবি, ‘‘রবিবার সারা দিন ওই নিয়েই ব্যস্ত ছিল ও। রাতে তৃণমূলের সভা ছিল। তা সেরে বাড়ি ফিরে আসে, আর বাইরে যায়নি।’’ রাজবাগানপাড়ায় বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে অন্য অভিযুক্ত গৌতম মণ্ডল ওরফে পুচুর স্ত্রী পিঙ্কি দাবি করেন, “আমার স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ যাঁর দায়ের করা, তিনি ওঁকে চেনেন না। তাঁকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করানো হয়েছে।” এই নিয়ে হইচই হওয়ায় তাঁদের তেরো বছরের ছেলে বাড়ি থেকে বেরোলেই টিটকিরির মুখে পড়ছে বলে তাঁর আক্ষেপ।

শান্তনুর স্ত্রী সোমা আপাতত তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়ি এবং ক্লাস ফাইভে পড়া ছেলেকে নিয়ে ঘর সামলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মিথ্যা অভিযোগের কথা শুনে রাতে তিনি বলেন, ‘‘আমি চাকদহেরই মেয়ে। ওদের প্রত্যেককে ভাল মতো চিনি। সে রাতে যাদের দেখেছি, তাদের নামই দিয়েছি।’’

বড় ছেলেকে আড়াল করার চেষ্টা করলেও ছোট ছেলে যে খুন করেছে তা অবশ্য রুনুও মানছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জলসা চলার সময়ে শান্তনু ওকে গালিগালাজ করেছিল। মাথার ঠিক রাখতে না পেরে ও গুলি করে।’’

ঘটনার পরে কি তাঁর সঙ্গে কালুর কথা হয়েছে? রুনু বলেন, ‘‘পুলিশ খুঁজছে জেনে আমিও ওকে পাগলের মতো খুঁজেছি। অনেক কষ্টে চুঁচুড়ায় গিয়ে দেখা পাই। কালু আমায় জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলে, ‘কী করে যে কী হয়ে গেল, তা বুঝতে পারছি না’! কয়েক জনের সঙ্গে মদ খেয়ে ও কাণ্ডটা করেছে।’’ তার পরেই তাঁর দাবি, ‘‘আমি ওকে পুলিশের হাতে তুলে না দিলে আমার ছেলেকে কেউ ধরতে পারত না! আমি মা হয়েও এটা করেছি, কেননা ও অন্যায় করেছে।’’

পুলিশের দাবি, সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় সড়কের ধার থেকে কালুকে পাকড়াও করা হয়েছিল। কিন্তু তাঁর মা যা দাবি করছেন, তাতে তাঁকে কার্যত ‘আত্মসমর্পণ’ করানো হয়েছিল। বাকি চার জন নিজে ধরা দেয়নি বলেই কি পুলিশ তাদের ধরতে পারছে না?

কল্যাণীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজহার এ তৌসিফ পাল্টা বলেন, ‘‘কেউ আত্মসমর্পণ করেনি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আমরাই ছেলেটিকে ধরেছি। বাকিদেরও ধরব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE