ঘড়ির কাঁটা টিকটিক করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে গড়াচ্ছে।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের মূল ফটক দিয়ে বেরিয়ে এল একটা দামি গাড়ি। দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু ওই গাড়ির ভিতরেই রয়েছেন চিকিৎসক কুমুদরঞ্জন বিশ্বাস এবং তাঁর ছায়াসঙ্গী কার্তিক বিশ্বাস।
গাড়িটা বেরিয়ে যেতেই সামান্য তফাৎ রেখে ফটক দিয়ে বেরিয়ে এল একটা মোটরবাইক। আরোহীর পরনে ঘন সবুজ জামা, নীল জিনস, মাথায় লাল ফুল-হেলমেট। যাকে আর একটু বাদেই চিকিৎসকের বাড়ির সামনে পিস্তল হাতে কার্তিককে গুলি করতে-করতে ছুটে যেতে দেখা যাবে!
গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে জেলা হাসপাতালের সামনের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল মোটরবাইকে আততায়ীর গাড়ির পিছু ধাওয়া করার ছবি। ধরা পড়েছে কৃষ্ণনগর শহরের রাস্তায় আরও কিছু ক্যামেরাতেও। পরে চিকিৎসকের বাড়ির সামনে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে সরাসরি খুনের দৃশ্যটিই দেখা যায়।
পুরসভা সূত্রের খবর, তদন্ত শুরু হওয়ার পরেই জেলার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) আমনদীপ এসে মনিটরে হাসপাতাল থেকে গাড়ি ও মোটরবাইক বেরনোর দৃশ্য খুঁটিয়ে দেখে যান। ছবি বড় করে বাইকের নম্বরও দেখার চেষ্টা করেন তাঁরা। পরে বাইকটি চিহ্নিত করে সেটির মালিক, ওষুধের স্টকিস্ট পিন্টু ভট্টাচার্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। অথচ নানা ক্যামেরায় দেখা যাওয়া আততায়ীর নাগাল পায়নি পুলিশ।
পুলিশকর্তারা যখন কৃষ্ণনগর পুরসভায় ফুটেজ দেখতে আসেন, সেখানে ছিলেন কার্তিকের এলাকারই কাউন্সিলর স্বপন সাহা। বুধবার তিনি বলেন, “শক্তিনগর হাসপাতালের সামনের সিসি ক্যামেরায় রাত ১১টা ৫ মিনিট থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রেকর্ড হওয়া ফুটেজ ওঁরা খুঁটিয়ে দেখেন। ওই সময়ের মধ্যেই ডাক্তারের গাড়ি বেরিয়ে আসার পরে বাইকটা বেরিয়ে আসে।’’
পুলিশের একটি সূত্রের মতে, হাসপাতালের ভিতরেই পিন্টুর বাইক নিয়ে আপেক্ষা করছিল আততায়ী। কুমুদরঞ্জন রাউন্ড শেষ করে কার্তিককে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে বাড়ির দিকে রওনা দিতেই সে পিছু নেয়। গোটা রাস্তাটাই সে গাড়ির পিছনে-পিছনে এসেছে। না-হলে বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে ঢুকে যাওয়ার সামান্য সময়ের মধ্যে সে পিছন থেকে ছুটে এসে গুলি করতে পারত না।
কৃষ্ণনগর শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বর্তমানে পুরসভার লাগানো ১৪১টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল থেকে কুমুদরঞ্জনের বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার পথে স্টেশন এলাকা ছাড়াও বেলডাঙা, বৌবাজার, নেদেরপাড়ার মোড় ও মাতৃসদনের সামনে ক্যামেরা রয়েছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, খুনের পরে আততায়ীকে ওই মোটরবাইকের পিছনে বসিয়েই পিন্টু ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে নামিয়ে দিয়ে এসেছিল। অথচ তার মুখ থেকে খুনির নামটুকু কেন বার করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্ন ঘুরছে শহর জুড়ে। ধৃত ওষুধের দালাল সাগর নাথ ওরফে বাবনকেও সাত দিন নিজেদের হেফাজতে জেরা করে খুনিকে কোথা থেকে ভাড়া করা হয়েছিল, সেই রহস্যের সমাধা করতে পারেনি পুলিশ।
কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহাও বলছেন, ‘‘শুধু হাসপাতালের গেট নয়, একাধিক সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে আততায়ীর ছবি। অথচ সেই একাধিক ফুটেজ দেখেও এত দিনে তাকে চিহ্নিত করা গেল না? গোটা বিষয়টা আমাদেরও অবাক করছে।” বারবার চেষ্টা করেও পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy