কেরলে জলে ডুবেছে বাড়ির একতলা। —নিজস্ব চিত্র।
মাস ছয়েক আগে, রুজির টানে কেরলে গিয়েছিলেন ডোমকলের রসুলপুরের রহিদুল ইসলাম। তবে, ওইটুকুই। কেরলে কোথায় গিয়েছে সে, কী তাঁর কাজ— প্রশাসনের কোনও স্তরেই তার খোঁজ নেই।
রসুলপুরের রহিদুল একা নন, ভিন প্রদেশে পেটের দায়ে পাড়ি দেওয়া এমনই অসংগঠিত শ্রমিকের ব্যাপারে কুয়াশায় রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন। বানভাসি কেরলে যোগাযোগহীন ওই শ্রমিকদের খোঁজ পড়তেই এখন আঙুল উঠেছে জেলা প্রশাসনের দিকে। এমনকি শাসকদলের স্থানীয় নেতারাও চোখ রাঙাচ্ছে জেলা কর্তাদের দিকে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই— দায় কি প্রশাসনের?
জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলছেন, ‘‘এটাই নিয়ম, কিছু হলে প্রশাসনের ঘাড়ে বন্দুক রাখাই চলতি রীতি। কিন্তু কোথায় কর্মসূত্রে পাড়ি দেবে তার দায় তো স্থানীয় প্রশাসনের নয়, বরং যিনি যাচ্ছেন তাঁরই উচিত নাম-ঠিকানা-কর্মক্ষেত্রের সাত-সতেরো সবিস্তারে জানিয়ে যাওয়া।’’
অসংগঠিত এই শ্রমিকেরা ভিন প্রদেশে পাড়ি দিলে নিজেদের উদ্যোগ নিয়েই এ কাজটা করা উচিত বলে মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি।
মজার কথা এই নিয়মের কোনও তোয়াক্কা যেমন শ্রমিকেরা করেন না তেমনই এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফেও কোনও প্রচার নেই।
ডোমকলের বাবুলবোনার মইদুল মণ্ডলও বছর খানেক ধরে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন। কেরলে বন্যায় যোগাযোগহীন মইদুল শেষতক ফোন করতে পেরেছেন বাড়িতে। তবে তিনিও জানাচ্ছেন, স্থানীয় ব্লক অফিসে জানিয়ে যাওয়াটা যে দস্তুর, তা ঘুণাক্ষরেও জানতেন না তিনি। বলছেন, ‘‘এক পরিচিতের মাধ্যমে এখানে কাজে এসেছি। কিন্তু ভিন রাজ্যে কাজে যেতে হলে প্রশাসনকে জানানোর যে নিয়ম আছে, তাই তো জানতাম না।’’
শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ভিন রাজ্যে শ্রমিকদের কাজে যাওয়ার বিষয়ে ‘ইন্টার স্টেট মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার আইন’ রয়েছে। এই আইন বলছে— ভিন রাজ্যে যে সংস্থায় কাজ করতে যাচ্ছেন তা বরাতপত্র-সহ সবিস্তারে স্থানীয় শ্রম দফতরে রেজিস্ট্রেশনের জন্য আবেদন করা নিয়ম। শ্রম দফতরের ছাড়পত্র পেলেই তবে কাজে যোগ দেওয়া উচিত, এটাই চলতি নিয়ম। তবে সে সবের ধার অবশ্য ধারেন না অধিকাংশ শ্রমিকই।
শ্রম দফতরের এক কর্তা বলছেন, ‘‘অসংগঠিত এই শ্রমিকদের অধিকাংশই স্থানীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে ভিন রাজ্যে যায়। তারা এ সব নিয়মের ধারে কাছ দিয়েই যান না।’’
জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, “ভিন রাজ্যে কিংবা ভিন দেশে কাজে গিয়ে কেউ সমস্যায় পড়ে আমাদের জানালে তবেই ব্যবস্থা নিতে পারি। তা ছাড়া আর উপায় কী।”
পুলিশের কাছেও এ বিষয়ে কোনও তথ্য নেই। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলছেন, “বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনের বিষয় থাকে, পুলিশ সেগুলি দেখে। একটা হিসেব থাকে তাই। কিন্তু ভিন রাজ্যে গেলে তার হিসেব রাখব কী করে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy