Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ

পদপিষ্ট মা সিসিইউতে, অক্ষত শিশু হাসপাতালে

হাসপাতালের আগুনে বুঝিবা ছারখার হয়ে গেল তাঁর সংসারটাই। এই চিন্তায় প্রায় হাল ছেড়ে ফেলেছিলেন দৌলতাবাদের প্রৌঢ়া জয়ন্তী মণ্ডল। অবশেষে অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত হাসপাতালেই খুঁজে পেলেন তাঁর বৌমা এবং সদ্যোজাত নাতিকে। নাতিকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেলেও পদপিষ্ট হয়ে অসুস্থ বৌমা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫১
Share: Save:

হাসপাতালের আগুনে বুঝিবা ছারখার হয়ে গেল তাঁর সংসারটাই। এই চিন্তায় প্রায় হাল ছেড়ে ফেলেছিলেন দৌলতাবাদের প্রৌঢ়া জয়ন্তী মণ্ডল। অবশেষে অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত হাসপাতালেই খুঁজে পেলেন তাঁর বৌমা এবং সদ্যোজাত নাতিকে। নাতিকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পেলেও পদপিষ্ট হয়ে অসুস্থ বৌমা।

গত মঙ্গলবার রাতে দৌলতাবাদ থানার হাসানপুর গ্রাম থেকে সদ্যোজাত অর্ককে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন জয়ন্তী মণ্ডল। জন্মের পর থেকেই শ্বাসকষ্ট ভুগছিল সে।

জয়ন্তীদেবী জানান, শনিবার বেলার দিকে তিন তলায় শিশুবিভাগে বৌমা দেবশ্রী নাতিকে কোলে নিয়ে বসেছিল। তিনি ছিলেন বাইরে। সেই সময় আচমকা ‘আগুন আগুন’ চিৎকার কানে আসে তাঁর। চারদিকে তখন ছোটাছুটি শুরু হয়ে গিয়েছ।

তিনি ছুট লাগিয়েছিলেন শিশুবিভাগের দিকে। শিশুবিভাগের মুখে এক নার্স তাঁকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে সেখান থেকে পালান। ঘর থেকে তখন শিশুদের কোলে নিয়ে মায়েরা নিচে নামার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘সেই ভিড়ের মধ্যে বৌমাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। খুঁজে পেলাম না নাতিকেও।’’

তখন দোতলা বেয়ে কালো ধোঁয়া গলগল করে তিন তলায় শিশুবিভাগের জানালা দিয়ে ঢুকছে। তাই দেখে জয়ন্তীদেবীও সিঁড়ি দিয়ে নেমে পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু সংকীর্ণ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময়ে ভিড়ের ধাক্কায় পড়েও যান তিনি। কোনও রকমে সেখান থেকে উঠে হাসপাতালের বাইরে এসে দাঁড়ান। সেখানে তখন অন্যান্য রোগীদের ভিড়। কান্নার আওয়াজ, ছোটাছুটিতে দিশেহারা অবস্থা তাঁর। সেখানে নাতি বৌমাকে খুঁজে না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। পুলিশকর্মী থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের ধরে ধরে নাতিকে খুঁজে দেওয়ার জন্য মিনতি জানান। কিন্তু সকলেই উদ্ধার কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রৌঢ়ার কথা কানে তোলেননি কেউ।

পরে দেখা যায়, সদ্যোজাত ওই শিশুটি হাসপাতালের বেডে বিছানায় একা একাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। কয়েকজন মা বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে বেরতে পারেননি। ওই সদ্যোজাতের মা ও তার পরিবারের কারও সন্ধান না পেয়ে কয়েকজন মহিলা অর্কর দেখভাল করেছিলেন। সন্তান স্নেহে আগলে রেখেছিলেন তাঁরা। ঘণ্টা চারেক পরে, অবস্থা যখন কিছুটা থিতিয়ে এসেছে, জয়ন্তীদেবী ফের শিশুবিভাগে খোঁজ করতে এসে নাতির সন্ধান পান।

ততক্ষণে জানা গিয়েছে, তিন তলার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময়ে বৌমা দেবশ্রীদেবী পদপিষ্ট হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নাতিকে শেষ পর্যন্ত ফিরে পেলেও প্রৌঢ়ার উৎকণ্ঠা শুরু এবার অসুস্থ বৌমাকে ঘিরে। তিনি জানান, বৌমার কি হবে কে জানে! যদিও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অর্ক এবং তার মা, দু’জনেই সুস্থ রয়েছে।

ঘটনার শেষে প্রশ্ন যদিও থেকে যাচ্ছে। অর্ক হাসপাতালের শয্যায় ছিল। বাইরে বেরতে পদপিষ্ট হন দেবশ্রী। তা হলে কী ছেলেকে ছাড়াই হাসপাতাল থেকে বেরচ্ছিলেন তিনি? উত্তর মিলছে না। উত্তর যিনি দিতে পারতেন, সেই দেবশ্রী হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসাধীন। তবে কেউ কেউ বলছেন, কোনও কাজে ওয়ার্ডের বাইরে গিয়েছিলেন তিনি। ফিরতে গিয়েই পদপিষ্ট হন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Stampede Murshidabad Medical College Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE