কৃষ্ণনাথ কলেজে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হবে। ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় পৌনে দু’শো বছর আগে ১৮৪৪ সালের ৩১ অক্টোবর আত্মঘাতী হয়েছিলন কাশিমবাজারের রাজা কৃষ্ণনাথ রায়। আগের দিনই নিজের নামে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার জন্য যাবতীয় সম্পত্তির দানপত্র উইল করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে আদালতের রায়ে সেই উইল অবশ্য বাতিল হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার দাবি উঠেছে বার বার। তবে শেষ পর্যন্ত আর হয়ে ওঠেনি।
অবশেষ সেই দাবি পুরণ হতে চলেছে। গত ১ অক্টোবর কলকাতা গেজেটে ‘দি মুর্শিদাবাদ ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট’ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় গড়া হবে। তবে, আইন পাশ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ ও স্থান নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
সাংসদ অধীর চৌধুরীর মতে, ‘‘ওই বিশ্ববিদ্যলয়ের সঙ্গে কৃষ্ণনাথের নাম না জুড়লে একটি ইতিহাস হারিয়ে যাবে। নাম হোক মুর্শিদাবাদ কৃষ্ণনাথ বিশ্ববিদ্যালয়।’’ তাঁর এই প্রস্তাবের পক্ষে কংগ্রেস স্বাক্ষর সংগ্রহে নেমেছে ইতিমধ্যেই। অধীরের কটাক্ষ, ‘‘তবে, একটা কথা না বলে পারছি না, স্থায়ী শিক্ষকের অভাবে চালু থাকা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পঠনপাঠন শিকেয় উঠেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় আসলে নির্বাচনী চমক ছাড়া আর কিছুই না।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুব্রত সাহা অবশ্য আশাবাদী, ‘‘জেলায় শিক্ষার একটা দিগন্ত খুলে গেল।’’ সেই সঙ্গে তিনি ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘ব্রিটিশ রাজত্ব করেছে প্রায় ২০০ বছর। কংগ্রেসও কয়েক দশক রাজ্য শাসন করেছে। ৩৪ বছর ছিল বাম জামানা। নির্বাচনী চমক হিসাবেও কোনও সরকারই কিন্তু বহরমপুরকে বিশ্ববিদ্যালয় দেয়নি। মাত্র ৭ বছরের তৃণমূল সরকার জেলার বহু আকাক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় দিল।’’
তবে সুব্রত সাহাও ‘মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়’ নামের সঙ্গে ‘কৃষ্ণনাথ’ শব্দটি যুক্ত করার পক্ষপাতী। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যের কাছে সেই প্রস্তাব তিনি ইতিমধ্যেই দিয়ে রেখেছেন বলে জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভায় বিল পাশ হওয়ার পরই ঐতিহাসিক কারণে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়-এর সঙ্গে কৃষ্ণনাথের নাম সংযুক্ত করার জন্য শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব দিয়েছি।’’
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হবে কোথায়, জানা গিয়েছে, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর ও ইউজিসি’র পৃথক টিম তিনটি জমি দেখে গিযেছে। সেই ৩টি জায়গার মধ্যে একটি বেছে নেওয়া হবে। কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৮-২০ একর জমির উপর কৃষ্ণনাথ কলেজ ও ৫টি হস্টেল আছে। উচ্চশিক্ষা দফতরের নির্দেশ মতো সেখানেই বিশ্ববিদ্যালেয়র পঠনপাঠন শুরু হবে।’’ ‘মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়’ নাম নিয়ে কোনও আপত্তি নেই মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের সাংসদ, তথা এবিটিএ-র রাজ্য সভাপতি বদরুদ্দোজা খানের। স্থান নিয়ে তাঁর বিকল্প প্রস্তাব, ‘‘বহরমপুর শহর এখন যানজটের শহর। ফলে বহরমপুর শহর লাগোয়া এলাকায় মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক।’’ ‘মুর্শিদাবাদ শিক্ষা প্রসার কমিটি’ নামের বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী একটি সংস্থার সম্পাদক এআর খান বলেন, ‘‘বহরমপুরে বিশ্ববিদ্যালয় হলে তার নাম হোক ‘বহরমপুর বিশ্ববিদ্যালয়’। যেমন কল্যাণী, যাদবপুর, বর্ধমান, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy