Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Tapas Paul

স্মৃতিতে ভাসছে তাপসের গুরুবাড়ি

প্রয়াত অভিনেতা তাপস পালের গুরুবাড়ি নবদ্বীপে। তাপসের বাবা-মা ছিলেন নবদ্বীপের সোনার গৌরাঙ্গ মন্দিরের প্রধান নিমাইচাঁদ গোস্বামীর শিষ্য।

 ‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার একটি দৃশ্যে তাপস পাল।

‘দাদার কীর্তি’ সিনেমার একটি দৃশ্যে তাপস পাল।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:১৯
Share: Save:

সে দিন ভরদুপুরে সোনার গৌরাঙ্গ মন্দিরের সামনে রাস্তায় হঠাৎই ভিড়। মন্দিরে প্রবেশের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। ভিড়ের মধ্যে অনেকে বলাবলি করছিলেন, ‘দাদার কীর্তির’ নায়ক এসেছেন মন্দির দর্শন করতে। চার দশক পেরিয়েও সে দিনটার কথা আজও স্পষ্ট মনে পড়ে শ্যামানন্দ গোস্বামীর।

প্রয়াত অভিনেতা তাপস পালের গুরুবাড়ি নবদ্বীপে। তাপসের বাবা-মা ছিলেন নবদ্বীপের সোনার গৌরাঙ্গ মন্দিরের প্রধান নিমাইচাঁদ গোস্বামীর শিষ্য। নিয়মিত নবদ্বীপে যাতায়াত। তাপস দীক্ষা নেন নিমাইচাঁদের পুত্র শ্রীজীব গোস্বামীর কাছে। ২০০০ সালে গুরুদেব মারা যাওয়ার পর তাঁর ভাই শ্যামানন্দকেই গুরুজ্ঞানে দেখতেন তাপস। শ্যামানন্দ বলেন, “যত দূর মনে আছে সে দিন তাপস এসেছিল কেরিয়ারের প্রথম সাফল্যে গুরুকে প্রণাম জানাতে। কিন্তু তাতে যে এমন কাণ্ড হবে আমরা কল্পনাও করিনি। শেষ পর্যন্ত পাড়ার ছেলেদের সাহায্যে মন্দিরের পিছনের গোয়ালের পাশ দিয়ে ওদের লুকিয়ে বার করতে হয়েছিল, এটা মনে আছে।”

শ্যামানন্দ জানান, সিনেমাটা দেখলেও তখন অনেকেই নায়কের নামের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু দাদার কীর্তির নায়ক সেই গোবেচারা ভালমানুষ ছেলেটির মুখ মনে পড়তেই তাঁকে একবার স্বচক্ষে দেখার জন্য মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন অনেকে। কিছুক্ষণের মধ্যে শ্রীবাসঅঙ্গন রোড একেবারে জনসমুদ্র! মন্দিরের উপর থেকে উঁকি মেরে তখন ইষ্টনাম জপছেন কর্তৃপক্ষ। অবস্থা সামাল দিতে ডাক পড়ল পাড়ার ছেলেপুলেদের।

দাদার কীর্তির নায়ককে গুরুবাড়ির গোয়াল দিয়ে লুকিয়ে বের করার রাস্তা করে দিয়েছিলেন সে দিনের যে ডাকাবুকো ছেলেটি, তিনি এখন নবদ্বীপ পুরসভার পোড়খাওয়া তৃণমূল কাউন্সিলর মিহিরকান্তি পাল। তিনি বলেন, “মনে আছে মন্দিরে ঢুকে দেখি, তাপস পাল তাঁর বছর দেড়েকের মেয়েকে সিদ্ধভাত মেখে খাওয়াচ্ছেন। আমরা নায়কের সঙ্গে ছবি তুলব বলে একটা ছোট বক্স ক্যামেরা নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি দেখেই প্রথমে বলেছিলেন, এই খাওয়ানোর ছবি তুলবেন না কিন্তু। তারপর ওঁদের খাওয়াদাওয়া শেষ হলে গোয়াল ঘরের ভিতর দিয়ে বার করে দিয়েছিলাম। আজ সে সব কথা খুব মনে পড়ছে।”

মঙ্গলবার সকালে তাপসের মৃত্যুর খবরে স্তম্ভিত শ্যামানন্দ বলেন, “ওদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বহু কালের। ওর বাবা, মা ছিলেন আমার পিতৃদেবের শিষ্য। তাপস ছিল দাদার শিষ্য, আমার বন্ধুর মতো। কিন্তু দাদার অবর্তমানে তাপস এবং নন্দিনী আমাকেই গুরুর মতো মানত। এ ভাবে ওঁর চলে যাওয়ার কথা ছিল না। আরও অনেক সম্মানের সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সব কেমন ওলটপালট হয়ে গেল শেষ কয়েকটা বছরে।”

তাপস নিয়মিত আসতেন নবদ্বীপে। সময় ভাল, খারাপ যেমনই চলুক গুরুবাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। দীর্ঘ দিন ধরে ওই মন্দিরে সেবার কাজ করেন অষ্টমীবালা ঘোষ। বহু বার দেখেছেন সপরিবার নায়ককে। তিনি বলেন, “এখানে আসার সময় ওঁর স্ত্রী শাড়ি পরে, তিলকসেবা করে তবে আসতেন। হঠাৎ করে ১০-১২ জন লোক নিয়ে চলে আসতেন। এসে অন্ন না খেয়ে যেতেন না। দিদি নিজে হাতে কুটে বেটে রান্নায় সাহায্য করতেন। সবাই মিলে মেঝেয় বসে প্রসাদ খেতেন।’’ ভোটে দাঁড়ানোর আগেও আশীর্বাদ নিতে এসেছিলেন তাপস। কৃষ্ণনগর থেকে ভোটে জিতেওছিলেন। এ দিন বিষাদমাখা গলায় শ্যামানন্দ বলেন, ‘‘বলেছিলাম জয়ী হবে। তবে আমি চাইনি ও রাজনীতিতে আসুক। না এলেই ভাল করত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE