গত বছর রাজবাড়ির পুজোয় রাজরাজেশ্বরী। ফাইল চিত্র
ইন্দো-ইরানি স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। পঙ্খের কাজ করা সুবিশাল নাটমন্দির লোকে লোকারণ্য। নাট মন্দিরের উত্তর দিকের শেষ মাথায় বেদির উপরে যোদ্ধার সাজে সজ্জিতা নদিয়া রাজবাড়ির দেবী দুর্গা রাজরাজেশ্বরী। নাটমন্দিরের মধ্যে গ্রিল দিয়ে ঘেরা দেবীর বেদির ডান দিকে মানুষ চলাচলের জন্য একটু জায়গা ছেড়ে রেখে জ্বলছে হোম কুণ্ড। যা প্রতিপদে জ্বালানো হয়, নেভানো হয় নবমী পুজোর পরে। বাঁ দিকে একই ভাবে খানিকটা অংশ ছেড়ে বসা নহবতের সানাইয়ের সুর ছড়িয়ে পড়ছে সমস্ত নাটমন্দির জুড়ে।
প্রতি বছর দুর্গা পুজোয় কৃষ্ণনগরে নদিয়া রাজবাড়ির এই পরিচিত ছবিটির কিছুটা পরিবর্তন হতে চলেছে এই বছর। কারণটা প্রতি দিন বেড়ে চলা করোনা সংক্রমণ। রাজবাড়ির বংশধর সৌমিশ চন্দ্র রায় জানালেন, ‘‘এই বছর দেবীর উচ্চতা দের ফুট ছোট করা হয়েছে।’’ কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বেহারার কাঁধে চেপে রাজ রাজেশ্বরীর বিসর্জনের রীতি। গায়ে গায়ে লেগে থাকা বেহারার সংখ্যা কমাতেই এই সিদ্ধান্ত।’’ এ ছাড়াও এই বছর নহবত বসবে না। দেবীর বেদির চার দিকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে বাঁশ বেঁধে দেওয়া হবে। দর্শনার্থীদের বাঁশের ও পার থেকে দেবী দর্শন করতে হবে।
অন্য বছর পরিচিত, স্বজন বা অনেকেই পুজোর সময়ে, বিশেষত সন্ধি পুজো বা বিসর্জনের বরণের সময়ে দেবীর বেদির কাছে বসতে পারতেন। এই বছর সে রকম ভাবে কাউকে দেবীর বেদির কাছে যেতে দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
প্রতি বছর বিসর্জনের সময়ে রাজমাতা অমৃতা রায়ের সঙ্গে সিঁদুর খেলার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে রাজবাড়িতে। ‘‘এই বছর করোনা পরিস্থিতির কারণে সিঁদুর খেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’ বলছেন অমৃতা দেবী।
রাজবাড়িতে পুজোর ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতেও বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজপরিবার। অন্য বছর দুর্গা পূজার সময়ে রাজবাড়ির গেট সকাল ৭টা থেকে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এ বছর দুপুরের দিকে কিছু ক্ষণ গেট বন্ধ রাখা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। মাস্ক ছাড়া কাউকেই রাজবাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না। বাড়ির ভিতরে ভিড়ের চাপ কমাতে গেট সম্পূর্ণ না খুলে আংশিক খুলে অল্প করে দর্শনার্থী ঢোকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ পরিবার।
অন্য দিকে, নাটমন্দিরে ভিড় এড়াতে অন্য বছরের মতো সেখানে বসার জন্য কোনও চেয়ার রাখা হবে না। রাজবাড়ির নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা যেমন বাড়ানো হবে, তেমন প্রশাসনের কাছেও নিরাপত্তা চেয়ে তাঁরা চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান সৌমিশ চন্দ্র রায়। একইসঙ্গে রাজবাড়ির তরফে তিনি দর্শনার্থীদের কাছে সহযোগিতাও প্রার্থনা করছেন, যাতে এই অতিমারি পরিস্থিতিতে নিয়ম মেনে সবাই রাজবাড়ির দেবী দর্শন করতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy