Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
লালগোলায় গ্রেফতার ২

মায়ের সামনে ছেলেকে খুন

তবে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ডোমকল মহকুমা এলাকায় গণ্ডগোল কিংবা খুন অত্যন্ত চেনা ঘটনা। শম্ভুনগরে বেড়া টপকে মুরগি চলে গিয়েছিল পড়শির বাড়িতে। তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে মুরগির পায়ে চোট লাগে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
লালগোলা শেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০১৭ ০২:২৭
Share: Save:

ডোমকলের ছোঁয়াচ এ বার লালগোলাতেও!

সামান্য একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে বচসা ও তার পরে খুন। অভিযোগ, পথের পাশে গম শুকোতে দিয়েছিলেন এক মহিলা। পাশেই খেলাধুলো, দৌড়ঝাঁপ করছিল কয়েক জন শিশু। সেই হুটোপাটিতে কিছু ধুলোবালি ছিটকে পড়ে বিছিয়ে রাখা গমের উপর। তাই নিয়ে প্রথমে বচসা। তার পরে লাঠি ও লোহার রড দিয়ে শুরু হয় গণপিটুনি। মারা যান বছর পঁয়ত্রিশের এক যুবক। লালগোলার দুগার্পুর-কলেজপাড়ার নিহত ওই যুবকের নাম আলাউদ্দিন আলি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ওই ঘটনায় খুনের অভিযোগে পুলিশ দু’জন পড়শিকে গ্রেফতার করেছে। অভিযুক্ত আরও চার জন পলাতক।

তবে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ডোমকল মহকুমা এলাকায় গণ্ডগোল কিংবা খুন অত্যন্ত চেনা ঘটনা। শম্ভুনগরে বেড়া টপকে মুরগি চলে গিয়েছিল পড়শির বাড়িতে। তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে মুরগির পায়ে চোট লাগে। সেই নিয়ে খুন হন এক জন। নসিপুরেও এক বাড়ির মুরগি গিয়ে ডিম পেড়েছিল পাশের বাড়িতে। তা নিয়েও তুলকালাম। শেষতক খুন। বিশ্বাসপাড়ায় নলকূপের জল কোন দিক দিয়ে যাবে তা নিয়েও গণ্ডগোলের জেরে খুনের ঘটনা ঘটে। দিন কয়েক আগে সামান্য কয়েকটি সজনে ডাঁটা নিয়েও গণ্ডগোল, হাসপাতাল, থানা, পুলিশ—বাদ যায়নি কিছুই।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ধৃত নাজিবুর রহমানের স্ত্রী সায়রা বিবি বাড়ির সামনে গম শুকোতে দিয়েছিলেন। সেখানেই মৃত আলাউদ্দিনের মেজো ছেলে, সপ্তম শ্রেণির রিজাল শেখ বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করছিল। রিজালের মা ফরিদা বেওয়ার অভিযোগ, ‘‘ছেলের হুটোপুটিতে কিছুটা ধুলোবালি ছিটকে গমের মধ্যে পড়ে যায়। তার জন্য রিজালকে মারধর করে নাজিবুরের স্ত্রী সায়রা বিবি। আমার সঙ্গেও সায়রার ধস্তাধস্তি হয়।’’ তারপর ঝামেলা থেমে গেলে বড় ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র ফারদিন শেখকে সঙ্গে করে ফরিদা বেওয়া লালগোলা বাজারে ইদের কেনাকেটা করতে চলে যান।

বাড়িতে তখন ছিলেন আলাউদ্দিনের মা বছর পঞ্চান্নর দুলা বিবি ও তাঁর নাতি রিজাল। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ পাশের গ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ সেরে বাড়ি ফেরেন আলাউদ্দিন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময় আলাউদ্দিন মদ খেয়েছিলেন। পুলিশ জানায়, ‘‘প্রতিবেশীর কাছে স্ত্রী-সন্তানেরা মার খেয়েছে শুনে ক্ষিপ্ত আলাউদ্দিন নাজিবুরদের উদ্দেশ্যে গালি দেন।

আলাউদ্দিনের মা বলেন, ‘‘নাজিবুররা ৭-৮ জন মিলে লোহার রড, বাঁশের লাঠি নিয়ে তেড়ে যায়। প্রাণের ভয়ে ছেলে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে টেনে বের করে রাস্তায় ফেলে লাঠিপেটা করে ছেলেকে মারে। ওদের হাত-পা ধরেও ছেলেকে বাঁচাতে পারলাম না। আমার সামনেই ওরা আমার ছেলেকে খুন করল।’’

রিজালদের বাড়িতেই একটি ছোটখাটো মুদির দোকান রয়েছে। সেই দোকান চালায় রিজালের মা ফরিদা দেওয়া। ফরিদা বলেন, ‘‘দোকানের সব জিনিস খুনিরা লুঠপাট করে নিয়ে চলে গিয়েছে। ক্লাস নাইন, ক্লাস সেভেন ও ফোরে পড়ে ৩ ছেলে। এখন তাদের লেখাপড়া ও খাওয়া-দাওয়া কী করে চলবে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE