Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Neuropathy

স্নায়ু নিয়েই স্নায়ুর চাপ, ধ্বস্ত রোগী

করোনার জন্য প্রায় সব জেলাতেই স্নায়ুসংক্রান্ত জটিলতার রোগীরা পড়েছেন অথৈ জলে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৫:৩৭
Share: Save:

বেশ কিছুদিন ধরে পার্কিনসনস রোগে ভুগছেন মধ্য সত্তরের শুভেন্দুনাথ ঘোষ। বর্তমান ভুলে যাচ্ছেন। শুধু অতীতের কিছু কথা মনে থাকছে। মাঝেমধ্যেই আপনমনে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ছেন। দরজায় তালা দিয়ে রাখতে হচ্ছে তাঁকে। কিন্তু করোনা এবং লকডাউনের আবহে তাঁর চিকিৎসা করাতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে বাড়ির লোককে।

পরিবারের সদস্যেরা জানালেন, আগে ডাক্তারবাবুর কথা মতো নির্দিষ্ট সময় অন্তর কলকাতায় নিয়ে গিয়ে চেকআপ ও প্রয়োজনীয় টেস্ট করানো হতো। কিন্তু এখন সেই প্রবাণ চিকিৎসক নিজেই চেম্বার করছেন না। ট্রেনও বন্ধ। বাসও সব চলছে না। প্রাইভেট গাড়ি এই সুযোগে প্রচুর টাকা চাইছে। তা ছাড়া শুভেন্দুবাবুকে নিয়ে কলকাতায় আসতেও তাঁরা ভয় পাচ্ছেন। পাছে করোনা সংক্রমণ হয় এই আশঙ্কায়। অথচ জেলাতে স্নায়ুর চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই বললেই চলে।

জেলার সরকারি হাসপাতালগুলিতে স্নায়ু বিভাগ হাতেগোনা। এমনকি অনেক জেলার মেডিক্যাল কলেজেও স্নায়ুবিভাগ নেই। ফলে করোনার জন্য প্রায় সব জেলাতেই স্নায়ুসংক্রান্ত জটিলতার রোগীরা পড়েছেন অথৈ জলে।

নবদ্বীপের শ্রীবাস রায়ের স্ত্রী দীর্ঘদিন কলকাতার এক নামী স্নায়ু বিশেষজ্ঞের কাছে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে শেষবার তিনি দেখে তিন মাসের ওষুধ দিয়েছিলেন। কথা ছিল, মে মাসে স্ত্রী সরস্বতী রায়কে চেকআপে নিয়ে যাবেন। কিন্তু সব ওলটপালট করে দিল করোনা ও লকডাউন। জুলাইয়ের মাঝামাঝি এসেও ডাক্তার দেখানোর কোনও সম্ভবনাই দেখছেন না শ্রীবাস রায়। এ দিকে, স্ত্রীর অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। পুরানো ওষুধে কাজ হচ্ছে না।

এই অবস্থায় খুব বাড়াবাড়ি হলে অধিকাংশ রোগীর বাড়ির লোক স্থানীয় ভাবে বিকল্প চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। কেউ নিরুপায় হয়ে অনেক টাকা দিয়ে গাড়ি বুক করে কলকাতা যাচ্ছেন। নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের সুপার বাপ্পা ঢালি বলেন, “ স্নায়ুরোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আমাদের হাসপাতালে নেই। আমরা পরামর্শ দিয়ে থাকি মেডিসিনের ডাক্তারবাবুকে দেখানোর। লকডাউনের আগে বেশিরভাগ লোকই কলকাতায় ডাক্তার দেখাতে চলে যেতেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষ মেডিসিনের ডাক্তারবাবুর কাছেই যাচ্ছেন।’’

মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মানস চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘স্নায়ুর আধুনিক চিকিৎসা অনেক বেশি পরীক্ষা নির্ভর। কিন্তু জেলার যে কোনও প্রান্তে চাইলেই এমআরআই, ব্রেনস্ক্যান, ইইজি বা এনসিভি টেস্ট করা যায় না। এর জন্য জেলা সদর বা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কলকাতায় যেতে হয়। এখন সেটা করা প্রায় অসম্ভব। ফলে রোগীরা অসম্ভব সমস্যায় পড়ছেন।’’

স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় ওষুধের পাশাপাশি অনেক রোগীর ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ থেরাপি প্রয়োজন হয়। লকডাউনে ফিজিওথেরাপি অদিকাংশ জায়গায় বন্ধ। ফলে অনেক স্নায়ুরোগীর শরীরের পেশি বা অস্থিসন্ধি অচল হয়ে যাচ্ছে। থেরাপিস্ট সুব্রত ভৌমিক বলেন, “প্রথম দু’-আড়াই মাস ক্লিনিক সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। যাঁদের নিয়মিত ফিজিও করা হত তাঁদের শারীরিক উন্নতির প্রক্রিয়া অসম্ভব ধাক্কা খেয়েছে। লক্ষ্য করছি, থেরাপি বন্ধ হওয়ায় অনেক রোগীর শরীরে ওষুধে একেবারে কাজ হচ্ছে না। তাঁদের অসুখ ক্রমশ দুরারোগ্য হয়ে উঠছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Neuropathy Covid 19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE