পঞ্চায়েতে প্রহরা। নিজস্ব চিত্র
জয় করেও তাঁদের ভয় যায়নি!
শনিবার বোর্ড গঠন করার পরেও কয়েকশো পুলিশকর্মীর মাঝখানে ভয়ে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা। বিজেপি-র ভয়ে রাতে বাড়ি যেতে পারেননি। সদ্য গঠিত বাগবেড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সেই সদ্য নির্বাচিত তৃণমূলের প্রধান মুন্নি মল্লিক, উপপ্রধান তনুশ্রী হালদার ও অন্যান্য সদস্যরা আপাতত ভয়ের চোটে কৃষ্ণনগরে হোটেল ভাড়া করে আছেন। একটা প্রশ্নই এখন এলাকার রাজনৈতিক মহলে ঘুরছে—‘এ ভাবে পঞ্চায়েতের কাজ হবে কী করে?’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের মতে, শনিবার বোর্ড গঠন হওয়ার পরে আর এক মুহূর্ত পঞ্চায়েতে থাকতে রাজি হননি নির্বাচিত প্রধান ও উপপ্রধান। শেষ পর্যন্ত পুলিশ প্রহরায় পুলিশের গাড়িতেই তাঁদের এলাকা থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রসঙ্গত, বোর্ড গঠনের দিন এলাকায় প্রায় ১৪০০ পুলিশকর্মী ছিলেন। হাজির ছিলেন পুলিশের একাধিক বড়কর্তা। এই রকমই এক কর্তার কথায়, ‘‘এর পর তো আমরা থাকব না বা এত পুলিশ থাকবে না। তখন কী হবে? বোর্ডের কাজ চলবে কী করে? এলাকার উন্নয়নের কাজ তো আর পুলিশ প্রহরায় করা যাবে না।’’
এলাকার বাসিন্দারাও আশঙ্কায় ভুগছেন। শনিবার তাঁরা তৃণমূল-বিজেপির ভিতর যে তুমুল বোমার লড়াই দেখেছেন তাতে এমনিতেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাঁরা এক রকম নিশ্চিত, আপাতত এই দুই যুযুধান গোষ্ঠীর লড়াই চলবে এবং গ্রামে শান্তির পরিবেশ উবে যাবে। নিরন্তর সন্ত্রাসই হবে সঙ্গী। এলাকার বাতাসে এমন কথাও ঘুরছে যে, পঞ্চায়েত অফিসের তালাই হয়তো খোলা যাবে না।
বাগবেড়িয়ায় সদ্য নির্বাচিত প্রধান মুন্নি মল্লিকের সঙ্গে রবিবার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রায় কেঁদে ফেলে বলেন, “ওই রাস্তা দিয়ে পঞ্চায়তে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হবে না! ওরা আমাকে খুনের হুমকি দিয়েছে। ওদের সঙ্গে যে সব দুষ্কৃতীরা আছে তাতে ওরা অনায়াসে খুন করতে পারবে।” বাগবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানকে পঞ্চায়েত যেতে গেলে ময়দানপুর, ভাতগাছি, কুলতলা গ্রামের উপর দিয়ে যেতে হবে। এই তিনটি গ্রামই বিজেপি-প্রভাবিত। আশপাশের এলাকাগুলিতেও বিজেপি ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করছে বলে খবর। এখন প্রশ্ন হল, প্রধান বা উপপ্রধান যদি পঞ্চায়েতেই না যেতে পারেন তা হলে কাজকর্ম চলবে কী করে?
তৃণমূলের নেতারা কেন এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করছেন না? বোর্ড গঠন করতে পারলেও তাঁরা কেন ব্যাকফুটে? এক তৃণমূল নেতার কথায়, “আমদের চাপড়া ব্লকের নেতৃত্বে রয়েছেন মুসলিম নেতারা। তাঁরা বাগবেড়িয়ায় গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইলে সাম্প্রদায়িক অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা করবে বিজেপি। আমরা তাই চুপ করে আছি। নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি প্রশাসনের উপরে।” চাপড়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জেবের শেখ বলছেন, “এই এলাকায় বিজেপি-র হয়ে যারা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সেই সব দুষ্কৃতীদের পুলিশ গ্রেফতার করলেই আমরা পঞ্চায়েত চালাতে পারব। কারণ, সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে।” যদিও বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের কথায়, “মানুষের সমর্থন থাকলে এ ভাবে শয়ে-শয়ে পুলিশ মোতায়ন করে বোর্ড গঠন করতে হয় না। মানুষের ভোটে যারা জিতেছে তাদের জোর করে হারিয়ে দিলে মানুষ খেপে যাবেই। আগামী দিনে ওই পঞ্চায়েত কী ভাবে চলবে তা ঠিক করবে এলাকার মানুষই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy