Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Bhoomipuja

ভূমিপুজোয় নিরুত্তাপ রামমন্দির

কিন্তু কেন? তা হলে কি ‘অবধ পুরী’র রামচন্দ্রের সঙ্গে চৈতন্যধামের রামসীতার দূরত্ব শুধুই ভৌগলিক নয়? আরও কোথাও ফারাক রয়ে গিয়েছে?

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০২০ ০৬:৫০
Share: Save:

প্রায় তিনশো বছর ধরে তিনি চৈতন্যধামে নিত্য পূজিত। নবদ্বীপ পুরসভার একটি এলাকা তাঁরই নামে— রামসীতাপাড়া। সকাল-সন্ধে পুজো ছাড়াও বহুকাল ধরে জাঁকজমকের সঙ্গে হয় রামনবমী।

অথচ অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজো ঘিরে তুমুল হইচইয়ের দিনেও নিরুত্তাপই রইল নবদ্বীপের রামসীতা মন্দির। বুধবার সকালে ১০টা নাগাদ বিজেপির কিছু লোকজন দল বেঁধে তরফে মন্দিরে পুজো দিতে আসেন। এ ছাড়া রুটিনে কোনও বদল নেই।

কিন্তু কেন? তা হলে কি ‘অবধ পুরী’র রামচন্দ্রের সঙ্গে চৈতন্যধামের রামসীতার দূরত্ব শুধুই ভৌগলিক নয়? আরও কোথাও ফারাক রয়ে গিয়েছে?

ওই মন্দির প্রসঙ্গে নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “ যত দূর জানা যাচ্ছে, ওই বিগ্রহ সতেরো শতকে নবদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত হয়। কে বা কারা করেছিলেন, তা জানা যায় না। সম্ভবত বহিরাগত কেউ। পরবর্তী কালে মহাপাত্র পরিবার পুরুষানুক্রমে ওই বিগ্রহের পুজো করে আসছেন। অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, এই দিনে হয়তো মন্দিরে বিশেষ পুজোপাঠ হবে।”

রামসীতা মন্দিরের পুরুষানুক্রমিক সেবায়েত প্রদীপ মহাপাত্র বলেন, “এই মন্দিরের রামসীতা, লক্ষ্মণ ও হনুমান বিগ্রহের বয়স তিনশো বছরেরও বেশি। নিত্যসেবা হয়। সেখানে আজ আলাদা করে কিছু করার দরকার বোধ করিনি। প্রতিদিন যেমন তাঁর সেবাপুজো হয়, এ দিনও তেমনই হয়েছে।” রামসীতা মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত প্রদীপ মহাপাত্র জানান, তাঁর ঠাকুরদা বটকৃষ্ণ এবং বাবা ভগীরথের থেকে তিনি শুনেছেন যে উত্তরপ্রদেশের কোন এক রামাইয়া সাধু ওই বিগ্রহ নিয়ে জলপথে যাওয়ার সময়ে ডাকাতের কবলে পড়েন। শেষ পর্যন্ত অলৌকিক ভাবে তিনি রক্ষা পান এবং স্বপ্নাদিষ্ট হন চৈতন্যধামে রামের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেই থেকে এই বিগ্রহ নবদ্বীপে। কিন্তু কোথাও এ দিন আলাদা করে পুজোর কথা তাঁরা ভাবেননি।

তা সত্ত্বেও যেমন কিছু অত্যুৎসাহী বিজেপি নেতাকর্মী লকডাউন অগ্রাহ্য করে এবং পারস্পরিক দূরত্বের বালাই না রেখে সকালে পুজো দিতে এসেছেন, মোটরবাইকে পতাকা লাগিয়ে ‘জয়শ্রী রাম’ ধ্বনি তুলে ঘুরতে দেখা গিয়েছে বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থককে। নদিয়ার অন্যত্রও রাম নিয়ে বাড়তি হইচই চোখে পড়েছে, বিশেষত বিজেপি প্রভাবিত দক্ষিণে। রানাঘাট, চাকদহ, বগুলা, শিমুরালি, শিকারপুর, হরিণঘাটার জাগুলি, রঘুনাথপুর হিজুলি ২ গ্রাম পঞ্চায়েতেও বিভিন্ন জায়গায় দলের তরফে পুজো করা হয়েছে। ফুলিয়ায় একটি সদ্যনির্মিত হনুমান মন্দিরের উদ্বোধনও পুজো হয়েছে এ দিন। নবদ্বীপের পুরাতন মন্দির সম্ভবত তার দীর্ঘ ইতিহাস আর ঐতিহ্যের জোরেই এর ব্যতিক্রম।

সংস্কৃতজ্ঞ গবেষক শুভেন্দুকুমার সিদ্ধান্তের মতে, “চার যুগে বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতারের মধ্যে রামচন্দ্রই শ্রেষ্ঠ, মর্যাদাপুরুষোত্তম। তিনি কোনও দলের নন, তিনি আপামর ভক্তের ঈশ্বর। অয্যোধ্যায় রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হল বলে কয়েকশো বছরের প্রাচীন মন্দিরে যেখানে নিত্যপুজো হয়, সেখানে আলাদা করে উৎসবের প্রয়োজন হয় না।” প্রবীণ ভাগবত পাঠক গোরাচাঁদ ভট্টাচার্যও বলছেন “বাঙালি রামচন্দ্রকে বহু দিন চিনেছে, সেই কৃত্তিবাসের আমল থেকে। বাঙালি বৈষ্ণব রামনবমীর ব্রতপালন করেন। বাঙালির রাম তার নিজের মতো, তাঁকে নতুন করে চেনাতে হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nabadwip bhoomipuja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE