Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

ইতিহাসের আঁকেবাঁকে পথ চেনাবে কে?

চৈতন্যের জন্মভিটে এখন গঙ্গাগর্ভে বলে অনেকেরই ধারণা। বিলীন শাস্ত্র ও ন্যায়চর্চার অতীত গরিমা। বরং গঙ্গার পূর্বপাড়ে মাথা তোলা মায়াপুরে উৎসব-পর্যটনের দৌলতে নতুন করে জীবন খুঁজছে এই শহর। কিন্তু পর্যটনের জন্য সত্যি কি সে প্রস্তুত? খোঁজ নিচ্ছে আনন্দবাজার। পুরপ্রধানের আশ্বাস, গ্রিন সিটি প্রকল্পে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পথঘাট। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভূগর্ভস্থ করা হয়েছে। যানজট কমাতে গৌরাঙ্গ সেতু থেকে পূর্বদিকে গঙ্গার পাড় বরাবর রাস্তার কাজ চলছে।

নবদ্বীপের বড় আখড়া। —নিজস্ব চিত্র।

নবদ্বীপের বড় আখড়া। —নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৫
Share: Save:

ঘিঞ্জি রাস্তা কী করে চওড়া হবে? দু’পাশের বাড়িঘর তো আর ভেঙে ফেলা যাবে না?

তিনতারা-চারতারা হোটেলই বা কী করে গজাবে রাতারাতি? শিল্পপতি কই, জায়গাই বা কোথায়?

নবদ্বীপের পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই দিনের পর দিন এই সব জবাবই শুনে আসছেন নবদ্বীপের মানুষ। অসত্যও নয়। হাজার বছরের বেশি ধরে অপরিকল্পিত ভাবে বেড়ে ওঠা একটা শহরের ভোলবদল সম্ভব রাতারাতি? কিন্তু তা বলে যানজট? পরিচ্ছনতা? টোটোর উৎপাত?

নবদ্বীপের পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহার দাবি, “ইতিমধ্যেই পর্যটকদের জন্য গড়া হয়েছে একাধিক সরকারি অতিথিশালা যুব আবাস। পুরসভা এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর আবাস গড়েছে। পিপিপি মডেলেও কাজ চলছে।’’ তা যে প্রয়োজনের তুলনায় কিছু নয়, বেসরকারি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়ে নিতে না পারলে ভাল হোটেল-রেস্তোরাঁও হওয়ার নয়, তা সকলেই জানেন।

তবে পুরপ্রধানের আশ্বাস, গ্রিন সিটি প্রকল্পে ঢেলে সাজানো হচ্ছে পথঘাট। বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ভূগর্ভস্থ করা হয়েছে। যানজট কমাতে গৌরাঙ্গ সেতু থেকে পূর্বদিকে গঙ্গার পাড় বরাবর রাস্তার কাজ চলছে। গঙ্গাতীরের সৌন্দর্যায়নও শুরু হয়েছে।

এ সব বলা যত সহজ, করা নয়। সময়সাপেক্ষ তো বটেই। কিন্তু যে পর্যটক শুধু ভক্তির টানে আসছেন না, ইতিহাস বা সংস্কৃতির শিকড়ের খোঁজ করছেন যিনি, তাঁকে গলিঘুঁজি চিনিয়ে ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও কি করা গিয়েছে? নবদ্বীপে কী দেখতেই হবে, আর কী না দেখলেও চলে, তা জানানোর মতো নির্ভরযোগ্য কেউ কি আছেন? আছেন হাজারদুয়ারি বা খাজুরাহোর মতো টুর গাইডেরা? আছে পর্যটক সহায়ক কেন্দ্র?

নবদ্বীপে গাইডের কাজটি আগে যে যার মতো করতেন রিকশাচালকেরা। এখন টোটো ও মোটরভ্যান চালকেরা করেন। পর্যটকদের নিয়ে এক মন্দির থেকে অন্য মন্দিরে যাওয়ার ফাঁকে তাঁরাই গল্পগাথা শোনান। যার কিছুটা হয়তো ঠিক, বাকিটা ভুলে ভরা। শ্রীচৈতন্য, নিত্যানন্দ, বিষ্ণুপ্রিয়া, শচীদেবী থেকে শুরু করে নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন সম্পর্কে মনগড়া গল্প শুনে বাড়ি ফেরেন ভ্রমণার্থীরা।

অথচ একটু চেষ্টা করলেই এই ব্যবস্থা করে ফেলা যেত। রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড বা খেয়াঘাটে গড়া যেত পর্যটক সহায়তা কেন্দ্র। শহরের দ্রষ্টব্যগুলি চিহ্নিত করে মানচিত্র টাঙানো শক্ত কিছু নয়। তথ্য সন্নিবেশ করে পুস্তিকাও রাখা যেতে পারত। বিনি পয়সায় যদি না-ও বা দেওয়া যায়, দু’পাঁচ টাকা দামে কিনতে অনেকেরই গায়ে লাগবে না। নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেবের মতে, “গুরুত্বপূর্ণ মোড়, ঘাট, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে ফ্লেক্স লাগিয়ে জায়গার নাম, যাতায়াতের ভাড়া ইত্যাদি তথ্য দেওয়া জরুরি যাতে বহিরাগতদের বিভ্রান্ত হতে না হয়।”

তবে সবচেয়ে উপকার হত যদি একগুচ্ছ তরুণ-তরুণীকে শিখিয়ে-পড়িয়ে গাইড হিসেবে তৈরি করা যেত। যে শহরে পুরাতত্ত্ব পরিষদ বা বঙ্গবিবুধ জননী সভার মতো প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে পড়ানোর মতো বিশেষজ্ঞ পাওয়া কঠিন কিছু নয়। শুধু ক্লাস নেওয়ার জন্য একটা পাকা জায়গা করতে হবে পুরসভাকে।

কর্তারা যদিও এখনও নড়ে না বসেন, পর্যটনে লক্ষ্মীলাভের খোয়াব না দেখাই ভাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chaitanya Birthplace Nabadwip Tourism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE