Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শুকোচ্ছে পাটচারা, বৃষ্টির জন্য মাথা কুটছেন চাষিরা

প্রখর গরমে জ্বলছে সারা জেলা। বেলা আটটার রোদও গায়ে জ্বালা ধরাছে। দুঃসহ এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে সকলেই তাকিয়ে এক টুকরো মেঘেরে দিকে। হাপিত্যেশ করে বসে চাষিরাও।

শুকিয়ে যাচ্ছে পাট খেত। — নিজস্ব চিত্র

শুকিয়ে যাচ্ছে পাট খেত। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৯
Share: Save:

প্রখর গরমে জ্বলছে সারা জেলা। বেলা আটটার রোদও গায়ে জ্বালা ধরাছে। দুঃসহ এই পরিস্থিতি থেকে বেরোতে সকলেই তাকিয়ে এক টুকরো মেঘেরে দিকে। হাপিত্যেশ করে বসে চাষিরাও। পাটচারা মাটি ছেড়ে সবে মুখ তুলতে শুরু করেছে। গাছের বেড়ে ওঠার জন্য এখনই চাই পর্যাপ্ত জল। কিন্তু তা মিলছে কই। আকাশে ছিটেফোঁটা মেঘের দেখা নেই। জলের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে চারা। একই দশা সব্জি চাষেও।

জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল হল পাট। করিমপুর, তেহট্ট, চাপড়া, নাকাশিপাড়া, কালীগঞ্জ, কৃষ্ণগঞ্জ, কৃষ্ণনগর-সহ জেলার সিংহভাগ ব্লকে পাট চাষ হয়। বছরে গড়ে ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়। চাষের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে আছেন লক্ষাধিক মানুষ।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন পাটগাছের বয়স ২০ থেকে ৩০ দিন। এ সময় গাছের শিকড় মাটির উপরি ভাগে থাকে। ফলে মাটির গভীরে গিয়ে জল সংগ্রহ করতে পারে না। সে কারণে বাইরে থেকে জল ছিটিয়ে গাছকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু একেবারে বৃষ্টি না হওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। জলের অভাবে শুকিয়ে যেতে শুরু করেছে চারা।

কৃষি দফতরের কর্তারা জানান, এই সময় পাট গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন ঝিরঝিরে বৃষ্টি। সাধারণত, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে গড়ে ২০ থেকে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। যা পাটগাছের বেড়ে ওঠায় কাজে লাগে। কিন্তু এ বছর তা হয়নি। দেখা নেই কালবৈশাখীরও।

তার উপর শুরু হয়েছে মাকড় পোকার আক্রমণ। চাষিরা জানাচ্ছেন, পোকার আক্রমণে ডগার পাতা ক্রমশ কুঁকড়ে যাচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, বৃষ্টি না হলে রোদের তাপ বাড়লে মাকড় পোকা পাতার নীচে আশ্রয় নেয়। পাতার রস খায়। ফলে পাতা কুঁকড়ে যায়। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। উপ কৃষি অধিকর্তা মনোরঞ্জন বিশ্বাস বলেন, ‘‘এপ্রিল মাসে নদিয়া খুবই কম বৃষ্টি হয়। এ বার তাও হয়নি। কালবৈশাখী হলেও পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু এ বার তাও নেই। এমনটা চলতে থাকলে পরিস্থিতি সত্যিই হাতে বাইরে চলে যাবে।’’

একই অবস্থা পটল, উচ্ছে, করলা, ঝিঙে ও শশা চাষেও। জলের অভাবে গাছের সতেজতা কমছে। ফল ধারণের ক্ষমতাও কমছে। বাদ নেই মাকড় পোকার উপদ্রবও। সব চেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে ফুলের পরাগ সংযোগের ক্ষেত্রে। জেলার উদ্যানপালন দফতরের এক বিশেষজ্ঞ জানান, রোদের তাপে পরাগ শুকিয়ে যাচ্ছে। তার উপর দিনের বেলা তাপমাত্রা এতটাই বেশি থাকে যে পরাগ সংযোগে সহায়ক পোকা বা পতঙ্গরা আসছে না। এরপরেও যদিও বা পরাগ মিলন সম্ভব হচ্ছে কিন্তু জলের অভাবে গর্ভমুণ্ড প্রায় শুকিয়ে থাকছে। ফলে পরাগ সংযোগটাও ঠিকমতো হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সব্জির উৎপাদন কমছে।’’ যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে বাজারে।

কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, জেলায় মূলত দুই ধরনের সেচের ব্যবস্থা আছে। এক হচ্ছে নদীর জল পাম্পের সাহায্যে তুলে তা সেচের কাজে ব্যবহার করা। আর একটি হল গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ জল তুলে তা ব্যবহার করা। কিন্তু নদীর জলও অনেকটা নেমে যাওয়ায় নদীর জল তুলে চাষের সুযোগ খুবই কম। আর ভূগর্ভস্থ জল তুলে সেচের ব্যবস্থা করে ব্যয়সাপেক্ষ। তার উপরে একেবারেই বৃষ্টি না হওয়ার ভূগর্ভস্থ জলের স্তরও অনেকটা নেমে গিয়েছে।

করিমপুরের রামনমগর এলাকার কৃষক সুকদেব প্রামাণিক বলেন, ‘‘জলস্তর নেমে যাওয়ায় শ্যালো মেশিনে জল উঠছে না। জল তুলে
খেত ভেজাতে ঘণ্টা সাতেক সময় লাগছে।’’ আরও এক চাষি করিমপুরের নওসদ মণ্ডল বলেন, ‘‘পয়সা খরচ করে জল ছিটিয়েও রক্ষে নেই। মাকড় পোকার আক্রমণে বিঘার বিঘা জমির পাট গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দু’এক দিনের মধ্য বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়বে’’

জেলার কৃষি আধিকারিক অনিমেষ বিশ্বাস বলেন,‘‘এমনিতেই পাট চাষে লাভ কম। তার উপরে মাকড় পোটা নাশক স্প্রে করতে গেলে অনেক খরচ। বিকল্প সেচেও অনেক খরচ হয়ে যাবে। ফলে এখনই বৃষ্টি হওয়াটা জরুরি। কী ভাবে কৃষকেরা এই পরিস্থিতি থেকে বের হতে পারেন তার জন্য আমরা সোমবারই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করব।’’

আপাতত আকাশের দিকে এক চিলতে মেঘের অপেক্ষায় হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে ছাড়া কিছু করার নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

jute field rain drought
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE