Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

থানায় নয় ধূমপান, পথ দেখাল বেলডাঙা-রানিনগর

মামলার চার্জশিট লিখছেন বা খুঁটিয়ে পড়ছেন কেস ডায়েরি। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শুভাশিস সৈয়দ 
শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০১:২১
Share: Save:

সে দিন কবেই গিয়েছে। বড়বাবু-মেজোবাবু থানার কুর্সিতে বসে ফুকফুক করে সিগারেট ফুঁকছেন আর এটা-ওটা সই করছেন, মামলার চার্জশিট লিখছেন বা খুঁটিয়ে পড়ছেন কেস ডায়েরি।

জনপরিসরে (পাবলিক প্লেস) অর্থাৎ আমজনতার আনাগোনা আছে এমন ছাদ-দেওয়ালে ঘেরা জায়গা বা অফিস-কাছারিতে ধূমপান নিষেধ হওয়ার পরে সে পাট চুকেছে। অন্তত প্রকাশ্যে। কিন্তু পুলিশ নয় নিজেকে সামলাল। নেতা গোছের লোকেরা থানায় কথা বলতে এসে ফস করে সিগারেট ধরিয়ে বসছেন। থানার সামনে গাছতলায় বসে বিড়ি টানছেন নালিশ জানাতে আসা বৃদ্ধ।

তার কী হবে? কিছু দিন আগেই রাস্তায় ধূমপান আটকাতে গিয়ে আইনি বিতর্কের মুখে পড়েছিল মুর্শিদাবাদ পুলিশ। যদিও সকলেই জানেন উদ্দেশ্য ভালই ছিল। সকলে না হলেও পুলিশের কেউ কেউ বুঝছিলেন সেই আপ্তবাক্যটার জোর — ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শিখাও’। কারও-কারও আবার বিড়ি-সিগারেট খাওয়া নিয়ে লুকোচুরি ভাল লাগছিল না। রানিনগর থানার সাব-ইনস্পেক্টর সমীর দত্ত যেমন। থানার চত্বরে বড়-বড় করে ‘ধূমপান বেআইনি’ লিখে টাঙিয়ে দেওয়া ইস্তক সুখটান দিতে তাঁকে বারবার বাইরে যেতে হত। তাতে ভারী বিরক্ত লাগছিল তাঁর। সমীরবাবুর কথায়, ‘‘সেই কলেজ জীবন থেকে বিড়ি-সিগারেটের নেশা। বারবার করে চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে কখনও গেটের বাইরে, কখনও থানার আবাসনে চুপিচুপি সিগারেট টানা আর পোষাচ্ছিল না। তাই ধুত্তেরি বলে ছেড়েই দিলাম। বদভ্যাস গেল।’’

বছর দুই আগে বেলডাঙা থানার ওসি অরূপ রায় ‘নো স্মোকিং জোন’ বলে বিজ্ঞপ্তি লাগিয়েছিলেন। পরে রানিনগর থানায় বদলি হয়ে এসে তারই পুনরাবৃত্তি ঘটান তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘থানার সমস্ত কর্মীকে প্রথমে বুঝিয়ে বলি। তাতে কাজ হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের অভ্যাস অত সহজে ছাড়া সম্ভব নয়। তাই কিছু ক্ষেত্রে কড়াও হতে হয়েছে। নির্মীয়মাণ ‘কমিউনিটি টয়লেট’-এর দেওয়ালে লেখা-আঁকায় ধূমপান নিয়ে সতর্কীকরণ। হাতেনাতে ফল-ও ফলেছে। হরেক নালিশ নিয়ে থানায় এসে ফস করে দেশলাইয়ের কাঠি জ্বেলেও এখন নিভিয়ে ফেলেন অনেকে। টুক করে ফের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেন বিড়ির প্যাকেট। অনেকে বাইরে বিড়ি ফোঁকা শেষ করে তার পর থানায় ঢোকেন। রানিনগর ব্লক তৃণমূল ব্লক সভাপতি শাহ আলম বলেন, ‘‘নানা লোকের কাজ নিয়ে থানায় প্রতি দিনই যেতে হয়। বাইরে বেরিয়ে কত বার সিগারেট খাওয়া যায়! তাই এখন চ্যুয়িংগাম খাই।’’ মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার জানান, রানিনগর ও বেলডাঙার মতোই বাকি থানাগুলিতেও ধূমপান বন্ধ করার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। আর নদিয়া? সেখানকার নতুন পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, ‘‘জনপরিসরে তো সিগারেট খাওয়া নিষেধ। সব থানা চত্বরে যাতে ধূমপান বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছি।’’

(তথ্য সহায়তা: সুস্মিত হালদার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Smoking Police station
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE