Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

একশো দিনের কাজে মাটি কাটছে যন্ত্র, ক্ষোভ

সোমবার সকালে দেখা গেল, শ্রমিকেরা নয়, একশো দিনের মাটি কাটছে জেসিবি! অভিযোগ, পুকুর খননের কাজে শ্রমিকের পরিবর্তে যন্ত্রের সাহায্যে মাটি কাটাচ্ছিলেন সালারের কাগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মালতী মাঝি।

যন্ত্রের সাহায্যে চলছে পুকুর খনন। বাবলায়। নিজস্ব চিত্র

যন্ত্রের সাহায্যে চলছে পুকুর খনন। বাবলায়। নিজস্ব চিত্র

কৌশিক সাহা
সালার শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ০১:০৯
Share: Save:

জমির পাশে বসানো রয়েছে মার্বেল পাথর। সেখানে স্পষ্ট করে লেখা— একশো দিনের কাজের প্রকল্প, বরাদ্দ টাকা, শ্রমদিবসের সংখ্যা। কিন্তু যাঁদের কাজ করার কথা সেই শ্রমিকেরা কোথায়?

সোমবার সকালে দেখা গেল, শ্রমিকেরা নয়, একশো দিনের মাটি কাটছে জেসিবি! অভিযোগ, পুকুর খননের কাজে শ্রমিকের পরিবর্তে যন্ত্রের সাহায্যে মাটি কাটাচ্ছিলেন সালারের কাগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের মালতী মাঝি। ভরতপুর ২ ব্লকের ওই ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকার কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ জানায় কান্দির মহকুমাশাসকের কাছে। তার পরেই নড়েচড়ে বসে স্থানীয় ব্লক প্রশাসন। প্রধান মালতী মাঝিকে শো-কজ করেছেন বিডিও পরিতোষ মজুমদার। অভিযুক্ত প্রধান মালতির দাবি, “আমি তো এই ব্যাপারে কিছুই জানি না। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। আমি অবশ্যই খোঁজ
নিয়ে দেখব।”

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অঞ্চলের বাবলা গ্রামে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে একটি নতুন পুকুর খনন করার সরকারি অনুমতি মিলেছে। স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্দিক রহমান ও আজিজুল শেখের জমিতে পুকুর খননের কাজ শুরু হয় গত রবিবার। তার আগে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সেখানে একটি সিমেন্টের বোর্ড বসানো হয়। তার উপরে মার্বেলে কাজের যাবতীয় খতিয়ানও লিখে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারেন একশো দিনের কাজ যেমন হয়, এখানেও তেমনই হবে। ওই কাজে কোনও ভাবেই যন্ত্রের ব্যবহার করা যাবে না। এমনকি ওই বোর্ড থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা জানতে পারেন পুকুর খননের জন্য প্রায় ৪ লক্ষ ৩ হাজার ২৬৬ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। শ্রমদিবসের সংখ্যা ২০২৯।

অথচ এ দিন সেখানে জেসিবিতে মাটি কাটা হচ্ছে দেখে প্রতিবাদ করেন স্থানীয় লোকজন। তার পরে স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব অভিযোগ জানান প্রশাসনের কাছে। স্থানীয় বাসিন্দা তারা শেখ, আকবর শেখ, মিফাজ শেখ, গোলাম মুস্তফারা বলেন, “২০১৭ সাল থেকে এই এলাকায় একশো দিনের কাজ হয়নি। আড়াই বছর পরে গ্রামে একটি কাজ হচ্ছে। সেখানেও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ আমাদের কাজে না নিয়ে যন্ত্রের সাহায্যে মাটি কাটাচ্ছে। এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া
যায় না।”

এলাকার কংগ্রেস নেতা বাবু দত্ত ও বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “তৃণমূলের দলনেত্রী কাটমানি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন। আর এখানে ওঁর দলের নেতারা কী ভাবে দুর্নীতি করছেন এই ঘটনাই তার বড় প্রমাণ। আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি। এর পরেও ওখানে যন্ত্রের সাহায্যে মাটি কাটানো হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’

ওই ঘটনার পরে প্রধানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কান্দির মহকুমাশাসক অভীককুমার দাস। তিনি বলেন, “বিডিওকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই প্রধানকে শো-কজ করার। প্রধানের কাছ থেকে উপযুক্ত জবাব না পাওয়া গেলে প্রধানের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও করতে বলেছি। যেখানে সাধারণ শ্রমিক ওই কাজ করার কথা, সেখানে জেসিবি দিয়ে মাটি কাটা হবে! এটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Salar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE