কলেজের গ্রন্থাগারে আংশিক সময়ের দুই শিক্ষককে চড়-ঘুসি-লাথি মারার অভিযোগ পেয়েও গোটা একটা দিন চুপ করে বসে রইল পুলিশ। শুক্রবার রাত পর্যন্ত কাউকে ধরা হল না।
এ দিন কলেজে ক্লাস অবশ্য স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে। মুখে কালো কাপড় বেঁধে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করেন প্রহৃত দুই শিক্ষক। তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েক জন শিক্ষক ছিলেন। বৃহস্পতিবার কলেজের টিএমসিপি নেতা সৌমিত প্রামাণিকের নাম করে তাঁদের ডাকা হয় এবং তাঁরা যেতে না চাওয়ায় মারধর করা হয় এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে হুমকিও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তার আগে জামিনে মুক্ত থাকা প্রাক্তন ছাত্রনেতা মনোজ সরকারও ফোনে তাঁদের হুমকি দিয়েছিল বলে তাঁরা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন।
কলেজের একটি সূত্রের দাবি, গত কয়েক বছরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয় দুই শিক্ষকের। এবং ওই শিক্ষকদের অভিযোগ, অধ্যক্ষের কাজের প্রতিবাদ করায় এই হামলা। প্রহৃত শিক্ষকদের অন্যতম রামকৃষ্ণ মণ্ডল বলেন, “কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হওয়ায় তাঁর পেনশন বন্ধ হয়েছে। আদালত প্রথমে ওই শিক্ষকের বিপক্ষে রায় দিলেও পরে তাঁর পক্ষে রায় দেয়। সেই সময়ে বর্তমান অধ্যক্ষের ভূমিকার বিরোধিতা করেছিলাম আমরা। মূলত তা নিয়েই অধ্যক্ষের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব।”
শান্তিপুর কলেজের ওই প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিমল গোস্বামী বলেন, “আমার পেনশন দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে। আদালত সম্প্রতি পেনশন মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু এখনও পেনশন চালু হয়নি।” বর্তমান অধ্যক্ষ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী আমার যা কিছু করার ছিল, আমি তা করেছি।’’ সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “বৃহস্পতিবার আমি বিকাশ ভবনে ছিলাম। পরে জানতে পেরেছি, কিছু ছাত্রের সাথে দু’জন শিক্ষকের বচসা এবং মারামারি হয়েছে। যা হয়েছে তা অনভিপ্রেত। আমাকে কেন জড়ানো হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না।”
কলেজের ভিতরে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনার নিন্দা করেছে বিভিন্ন মহল। ওয়েবকুটার জেলা সম্পাদক বিমান সমাদ্দার বলেন, “এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। আমরা তীব্র নিন্দা করছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক সুসম্পর্ক থাকাই কাম্য।” আর এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক শান্তনু সিংহের কটাক্ষ, “শাসক দলের কথা না শুনলেই শিক্ষকদের নিগৃহীত হতে হবে। এটাই তো টিএমসিপি-র সংস্কৃতি!”
মনোজ সরকার নামে যে প্রাক্তন ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ফোন করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, তিনি আগেই ধর্ষণ ও খুনের মামলায় জেল ঘুরে এসেছেন। শান্তিপুর কলেজের প্রাক্তন ছাত্রনেতা মনোজের বিরুদ্ধে স্টাফরুমে ঢুকে শিক্ষকের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকানোর অভিযোগও ছিল। মনোজ অবশ্য দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শান্তিপুরে ঢুকতে পারব না, এই শর্তেই আমি জামিন পেয়েছি। তাই শান্তিপুরের বিষয়ে আমি আর মাথা ঘামাই না। কাউকে ফোনও করিনি। আমায় মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে।”
শিক্ষক নিগ্রহের দায় নিজেদের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে চেষ্টা করছে টিএমসিপিও। দলের জেলা সভাপতি সৌরিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “যত দূর শুনেছি, ঘটনার সময়ে সৌমিত কলেজে ছিল না। আর মনোজ সরকার এখন আর আমাদের কেউ নয়। টিএমসিপি-কে এই ঘটনায় অহেতুক জড়ানো হচ্ছে।” বারবার চেষ্টা করা হলেও পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy