Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাই-বোনের কাজিয়া, দিনভর রাস্তায় পড়ে রইল বাবার দেহ

মরেও শান্তি নেই! আক্ষরিক অর্থেই তা ফলে গেল তেহট্টের রাইচরণ মণ্ডলের ক্ষেত্রে। ছেলে-মেয়ের মধ্যে গণ্ডগোলের জন্য দিনভর রাস্তাতেই পড়ে রইল তাঁর মৃতদেহ। গোটা ঘটনায় হতবাক তাঁর আত্মীয়স্বজনরা। এমন ঘটনায় অবাক হাসপাতালের কর্মী থেকে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়েরা।

রাস্তায় শোয়ানো রয়েছে বাবার দেহ। — নিজস্ব চিত্র।

রাস্তায় শোয়ানো রয়েছে বাবার দেহ। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:৫৬
Share: Save:

মরেও শান্তি নেই!

আক্ষরিক অর্থেই তা ফলে গেল তেহট্টের রাইচরণ মণ্ডলের ক্ষেত্রে। ছেলে-মেয়ের মধ্যে গণ্ডগোলের জন্য দিনভর রাস্তাতেই পড়ে রইল তাঁর মৃতদেহ।

গোটা ঘটনায় হতবাক তাঁর আত্মীয়স্বজনরা। এমন ঘটনায় অবাক হাসপাতালের কর্মী থেকে অন্যান্য রোগীর আত্মীয়েরা।

রাইচরণবাবুর দুই ছেলে এক মেয়ে। দুই ছেলেই ওড়িষায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। মেয়ে রিনা বিশ্বাসের শ্বশুর বাড়ি ভীমপুরের পলদা-মুড়াগাছা এলাকায়। বিয়ের পর থেকেই রাইচরণবাবুর ছেলেদের সঙ্গে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির লোকেদের সম্পর্ক খারাপ।

মাস চারেক আগে রাইচরণবাবুর স্ত্রী ইন্দুবালাদেবীর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে মেয়ের কাছেই থাকতেন রাইচরণবাবু। শনিবার বিকেলে তিনি মেয়ের বাড়িতে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে প্রথমে তেহট্ট গ্রামীণ হাসপাতাল, পরে সেখান থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের নিয়ে আসা হয়।

শনিবার রাত দু’টো নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয় তার। রবিবার সকালেই রিনাদেবী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে মৃতদেহ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য হাসপাতালের বাইরে নিয়ে আসেন। এরই মধ্যে সকাল দশটা নাগাদ চলে আসেন রাইচরণবাবুর ছোট ছেলে মহেন্দ্র। তিনি মৃতদেহটি তেহট্টের বাড়িতে নিয়ে যেতে চান। তাতে আপত্তি জানান রিনাদেবী।

এই নিয়ে ভাই-বোনের মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায়। পরে মহেন্দ্রর সঙ্গে বচসা শুরু হয় রিনার শ্বশুর গুরুদাস বিশ্বাসের। অভিযোগ, সেই সময় রিনার শ্বশুর বাড়ির লোকজন ডেথ সার্টিফিকেট-সহ অন্যান্য কাগজপত্র নিয়ে চলে যায়।

মহেন্দ্রর অভিযোগ, “ওরা কাগজপত্র ফেরত দিতে চাইছিল না। সেই কারণে বাবার মৃতদেহ দাহ করতেও নিয়ে যেতে পারছিলাম না।’’ এই অভিযোগ অস্বীকার করে রিনাদেবী বলেন, “দাদা মিথ্যা কথা বলছে। ওরা আমাদের কাছে ডেথ সার্টিফিকেট চায়নি। আমাদেরও জানা ছিল না যে, ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া মৃতদেহ সৎকার করা যায় না।” তাঁর অভিযোগ, “দাদা আমার শ্বশুরকে অপমান করল বলেই তো আমি রাগ করে চলে এলাম। শ্বশুরের অপমান মানি কি করে?”

শেষ পর্যন্ত রাইচরণবাবুর গ্রামের লোকজন রিনার বাড়ি গিয়ে অনেক অনুরোধ করে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে আসেন। রবিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ মৃতদেহ নিয়ে নবদ্বীপ শ্মশানের উদ্দেশ্যে রওনা হন তাঁরা।

তার আগে দিনভর রাস্তার উপরেই সাদা কাপড়ে ঢাকা মৃতদেহ পড়ে রইল রাস্তাতেই। শ্মশান রওনা হওয়ার আগে রাইচরণবাবুর এক আত্মীয়ের মন্তব্য, ‘‘বাবা, এ তো মরেও শান্তি নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE