Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

হেঁশেল নাকি পড়ুয়া, স্কুলে সামাল সামাল

এক শিক্ষক, খান পাঁচেক ক্লাস, বহু ছাত্র, এই তুমুল অসম অনুপাত নিয়ে এখনও চলছে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের কিছু স্কুল।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

ওঁরা ছেলে পড়ান, এ ক্লাসে ভারতের ভৌগলিক সীমানা তো মিনিট দশেক পরে অন্য ক্লাসে গিয়ে লসাগুর অঙ্ক। সঙ্গে খেয়াল রাখেন, কেউ হট্টগোল করল কিনা, পাঁচিল ডিঙিয়ে পালিয়ে গেল কিনা কেউ, মিডডে মিলের রান্নায় ঝাল হল নাতো! আবার, হঠাৎ এসে পড়া অভিভাবকের বায়নাক্কা, হ্যাঁ, সামাল দিতে হয় তা-ও।

তিনি শিক্ষক, স্কুলের একমাত্র অভিভাবক তাঁর ছাত্র-সংখ্যা কোথাও শ’খানেক কোথাও তার চেয়ে কিঞ্চিৎ কম। এক শিক্ষক, খান পাঁচেক ক্লাস, বহু ছাত্র, এই তুমুল অসম অনুপাত নিয়ে এখনও চলছে নদিয়া-মুর্শিদাবাদের কিছু স্কুল।

নদিয়ার ধুবুলিয়ার কামারহাটি শ্যামলাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উঁকি মেরে দেখুন, ছবিটা অবিকল এই রকম। ৭৩ জন পড়ুয়াকে সামলে চলেছেন একমাত্র শিক্ষক। তেহট্টের চকসাদিখালি প্রাথমিক স্কুলেও ছাত্র-ছ্তারী একটু কম ৬৬ জন। তবে, শিক্ষক? সাকুল্যে দু’জন। স্কুলের পাঁচটি ক্লাস তারা দু’জনে ভাগ করে পড়ান। আর তা করতে গিয়ে আর যাই হোক সেই সব স্কুলে পড়াশুনোটা শিকেয়। নদিয়া জেলায় পায়ে পায়ে প্রান্তিক এলাকায় হাঁটলে, এমন হিমসিম খাওয়া শিক্ষকের সংখ্যাটা অগুন্তি। কোথাও এক, কোথাও বড়জোর দুই। নদিয়ায় প্রাথমিক স্কুলের সংখ্যা ২৬৩৯। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এমন স্কুলের সংখ্যা সরকারি হিসেবে অন্তত ২৫টি। আর, মুর্শিদাবাদের ৩১৮৪টি স্কুলের মধ্যে এক বা দু’জন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে চলছে এমন স্কুলের সংখ্যা অজস্র।

তবে এর একটা উল্টো চিত্রও আছে, মুর্শিদাবাদের যুগসড়া জুনিয়র প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক এক জন হলেও পড়ুয়া সংখ্যা মাত্র ৫ জন। সংসদের দাবি, পড়ুয়া সংখ্যা এত কম বলেই সেখানে আর শিক্ষক দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু তথ্য তো সে কথা বলছে না, ওই স্কুলে আগে তো ওত কম পড়ুয়া ছিল না! কোনও সদুত্তোর মেলেনি। দুই জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কর্তাদের দাবি, যে সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কম সেখানেই একজন বা দুজন করে শিক্ষক আছে। তবে নদিয়া জেলায় সর্বত্রই যে কারণটা এক তা বলা যাচ্ছে না। তা হলে, ধুবুলিয়া কিংবা তেহট্টের স্কুলের ক্ষেত্রে কি বলবেন?

নদিয়ার প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রমাপ্রসাদ রায় বলছেন, ‘‘আমরা খোঁজ করছি, কোন স্কুলে এমন হাল, দেখছি ওই স্কুলগুলিতে অন্য কোনও স্কুল থেকে শিক্ষক পাঠানো যায় কিনা।’’ আর, মুর্শিদাবাদের চেয়ারম্যান নীহারকান্তি ভট্টাচার্য়ের জবাব, ‘‘কোথায় বেশি কোথায় কম শিক্ষক তার খোঁজ চলেছে, রাতারাতি তো সম্ভব নয়। যত দ্রুত সম্ভব সমস্যাটা মেটানো হবে।’’ যা শুনে নিত্য হিমসিম খাওয়া এক সিক্ষক বলছেন, ‘‘আসলে দ্রুত শব্দটা খুব আপেক্ষিক কিনা!’’

তেহট্টের চকসাদিখালি প্রাথমিক স্কুলের প্রাধান শিক্ষক মৈত্র মন্ডল। দিনান্তে হাঁফ ধরে যায় তাঁর। বলছেন, “দু’জনে মিলে পাঁচটা ক্লাস সামলানো, মিডডে মিল দেখা , ছেলেদের স্কুলে বেঁধে রাখা— আর পেরে উঠছি না!’’ মুর্শিদাবাদের বাঁশগোলা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক মির্জা ওয়াসিন হোসেনও মেনে নিচ্ছেন, ‘‘সামাল দিতে দিতে বুড়িয়ে গেলাম, নতুন শিক্ষক আর এল না!’’ এ জেলারই রামরাজাপুর বিদ্য়াসাগর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক সুব্রত দেবশর্মা বলছেন, ‘‘এ ভাবে সামাল দিতে দিতে ছুটি নেওয়াটাই ভুলে গেছি। দু’জন শিক্ষক, এতগুলো ছেলেমেয়ে কেমন পাগল পাগল লাগে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Schools Students Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE