Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সব জেনেও পঞ্চায়েত চুপ কেন?

প্রায় শ’খানেক চাষি বৃহস্পতিবার তিনটি ম্যাটাডোরে চেপে কল্যাণীতে মহকুমাশাসকের দফতরে মাটি কাটা নিয়ে অভিযোগ জানান। তাঁরা দাবি করেন, তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান কুমুদ সরকার ও স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বিশ্বাসের মদতেই মাটি মাফিয়ারা তাঁদের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছিল।

অবৈধ ভাবে তোলা চলছে মাটি কাটা। কল্যাণী। নিজস্ব চিত্র

অবৈধ ভাবে তোলা চলছে মাটি কাটা। কল্যাণী। নিজস্ব চিত্র

মনিরুল শেখ
কল্যাণী শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:৩৩
Share: Save:

বাইরে থেকে লোক জন এসে গ্রামের ভিতর চাষিদের জমিতে দফায়-দফায় মাটি কাটল, জমিতে জেসিবি নামল, অথচ পঞ্চায়েতের কর্তারা বসে বসে দেখলেন? এই প্রশ্নেই এখন তোলপাড় মদনপুর-২ পঞ্চায়েতের শিকারপুর।

প্রায় শ’খানেক চাষি বৃহস্পতিবার তিনটি ম্যাটাডোরে চেপে কল্যাণীতে মহকুমাশাসকের দফতরে মাটি কাটা নিয়ে অভিযোগ জানান। তাঁরা দাবি করেন, তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান কুমুদ সরকার ও স্থানীয় যুব তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বিশ্বাসের মদতেই মাটি মাফিয়ারা তাঁদের জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছিল। অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন কুমুদবাবু ও সঞ্জয়বাবু—দু’জনেই।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, গ্রামে দিনের পর দিন এত লোককে মাটি কাটতে দেখে এবং চাষিদের অভিযোগ পেয়েও পঞ্চায়েত কেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল? কেন পঞ্চায়েত প্রধান মাটি কাটার বৈধ অনুমতিপত্র যাচাই করেননি? কেন জানতে চাননি, কোন দফতর থেকে কার নির্দেশে এই মাটি কাটা হচ্ছে? স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও বিষয়টিতে খোঁজখবর না-নিয়ে হাত গুটিয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ।

পঞ্চায়েত, প্রশাসন ও স্থানীয় শাসক দলের নেতাদের এই নীরবতাই আসলে মাটি কাটার ব্যাপারে তাঁদের সম্মতি ছিল বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। তাঁদের প্রত্যেকের স্বার্থ এর সঙ্গে জড়িত ছিল বলে চোখের সামনে প্রায় দু’মাস মাটি কাটা দেখেও পঞ্চায়েত রা কাড়েনি বলে দাবি করেছেন বিজেপির দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার স্বাস্থ্য সেলের আহ্বায়ক কৃষ্ণ মাহাতোর।

তিনি বলছেন, ‘‘আমি এলাকার চাষিদের নিয়ে অনেক দিন ধরেই মাটিকাটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। কুমুদ দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। তিনিই মাটি কাটায় মদত দিয়েছেন।’’ কুমুদবাবু দাবি করেছিলেন, তাঁর ধারণা ছিল, মৎস্য দফতরের লোকজন খাল কাটার জন্য মাটি কাটছে। তাই তিনি কিছু বলেননি। এখানেই স্থানীয় মানুষের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, পঞ্চায়েত প্রধান এটা ভেবে নেন কী করে? কেন তিনি কাগজপত্র দেখতে চাইলেন না? বার-বার যখন চাষিরা গিয়ে জানাচ্ছেন যে, তাঁদের ব্যক্তিগত জমির মাটি কাটা হচ্ছে তখনও তিনি চুপ করে রইলেন কেন? তা ছাড়া, খাল তো কাটে সেচ দফতর। তিনি মৎস্য দফতরের কথা ভাবলেন কেন?

গোটা বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েতও যথেষ্ট অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে। কুমুদবাবু এখন বলছেন, ‘‘আমার উচিত ছিল ওঁরা কারা, কোথায় কী কাজ করবে ভাল করে জানা এবং ম্যাপ দেখা। ওটা আমার ভুল হয়েছে। কিন্তু মাটি কাটায় আমি মদত দিইনি। বিরোধীরা আমার নাম জড়িয়ে দিচ্ছে। এটা একটা চক্রান্ত।’’

চাষিদের একাংশ এমনও অভিযোগ করেছেন যে, সন্ধ্যা হলেই স্থানীয় তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বিশ্বাসের লোকজন এলাকায় টহল দিত। কেউ যাতে মাটি কাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানাতে না-যায় তার জন্য ভয় দেখাতো। সঞ্জয়বাবু এ ব্যাপারে বলেছেন, ‘‘এটা ঠিক কথা নয়। ওখানকার কিছু মাটি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু আমি এর সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নই।’’

তাঁদের জমি থেকে যাতে আর কেউ মাটি কাটতে না-পারে তার জন্য চাষিরা শুক্রবার কল্যাণী আদালতে মামলা দায়ের করতে গিয়েছিলেন। কিন্তু উকিল নিয়ে কিছু সমস্যা হওয়ায় শেষ পর্যন্ত মামলা দায়ের করা যায়নি। এ দিন শিকারপুর গিয়ে দেখা গেল, গ্রামে চাষিদের মধ্যে চাপা ভয় রয়েছে। কেউ সে ভাবে মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে মাটি কাটা রোখার ব্যাপারে তাঁরা এককাট্টা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayat TMC Illegal Land Business Land Mafia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE