ভূমিকম্পের জেরে শিলিগুড়ির একটি বাড়িতে ফাটল। —নিজস্ব চিত্র
খাটের ওপরে বালিশে মাথা দিয়ে একটি ম্যাগাজিনে নজর দিয়েছেন। এমন সময় খাটটা ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো। এক-আধ সেকেন্ড নয়, প্রায় ২০ সেকেন্ড, টানা।
কপালের ঘাম মুছছেন তিমির মণ্ডল। তিনি একা নন, খাগড়া থেকে ইন্দ্রপ্রস্থ, গোরাবাজার থেকে স্বর্ণময়ী— বহরমপুরের অলিগলি সর্বত্রই ছুঁয়ে গিয়েছে সেই কম্পন। সেকেন্ড কয়েকের মধ্যেই বুঝতে অসুবিধা হয়নি ভূমিকম্প হচ্ছে। শাঁখ বাজতে শুরু করে বাড়িতে বাড়িতে, অনেকেই বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। হাঁকডাক হইচই হঠাৎ করে যেন শহর জুড়ে শোরগোল পড়ে য়ায়।
বহরমপুরের প্রান্তিকপাড়ার বাসিন্দা মুন্না মুস্তারি বলছেন, ‘‘কতম্পনটা মৃদুই ছিল তবে, ভূমিকম্প বলে কথা। ভয় তো এড়াতে পারিনি। সপরিবারে রাস্তায় নেমে এসেছিলাম। ঘরে ঢুকতেই ভয় করছিল।’’ গোরাবাজারের তিতিক্ষা ঘোষরায়র অভিজ্ঞতাটা অন্যরকম—সবে রান্নার কাজ শেষ করে পাশের ঘরে এসে একটু বসেছেন। এমন সময় রান্নাঘরে হাতা খুন্তির ঝনঝন করে ওঠা। বলছেন, ‘‘আমি তো ভয়ে কাঠ, কী হল রে বাবা!’’ রান্নাঘরে বিড়াল ঢুকেছে ভেবেছিলেন তিনি। হয়ত তারাই হাতা-খুন্তি নাড়াচ্ছে। বলছেন, ‘‘কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে দেখি বিড়াল তো নেই।’’ পরে টিভিতে দেখেন, এই কাণ্ড।
জিয়াগঞ্জের ভট্টপাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সুধিররঞ্জন সাহা ঘরে বেতের চেয়ারে বসে টিভি দেখছিলেন। ওই সময় চেয়ার কেঁপে ওঠে। এর পরে তাঁর চোখ পড়ে দরজার শেকলে। তিনি দেখেন, শেকল নড়ছে। সুধিররবাবুর কথায়, ‘‘শেকল নড়ছে দেকে হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। পরক্ষণেই মনে হল ভুমিকম্প নয় তো, ততক্ষণে শাঁখ বাজতে শুরু করেছে।’’
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলাগানাথন বলছেন, “এ দিন জেলার বিভিন্ন এলাকায় মৃদু ভূমিকম্প হয়েছে। তবে জেলায় ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর নেই।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে বুধবার সকাল ১০ টা ২০ মিনিট ৪৯ সেকেন্ড ভূমিকম্প অনুভুত হয়েছে। অসমের কোঁকড়াঝড়ে ১৩ কিলোমিটার মাটির গভীরে ভূমিকম্পের উৎসস্থল। স্থানীয়রা জানান, মুর্শিদাবাদে ২০ সেকেন্ড ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। একে ‘আফটার-শক’ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।’’
মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে কান্দি, ফরাক্কা, লালগোলা, ভগবানগোলা, সাগরদিঘি, ডোমকলসহ জেলাজুড়ে ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। তবে মৃদু ভূমিকম্প হওয়ার কারণে অনেকে বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারেননি। পরে সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা দূরদর্শনে চোখ রাখতেই বিষয়টি তাঁদের নজরে আসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy