Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Mahua Moitra

অফিস উদ্বোধন করলেন মহুয়া, নেই রুকবানুর 

অনেকেই বলছেন, “সাংসদ বনাম বিধায়কের লড়াইটা বেশ জমে উঠেছে।”

মহুয়া মৈত্র। —ফাইল ছবি

মহুয়া মৈত্র। —ফাইল ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা 
চাপড়া শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৬:০৫
Share: Save:

চাপড়ায় তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কমা দূরে থাক, ক্রমশ তা বাড়ছে। দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনের সময় দলের দু’পক্ষের প্রকাশ্য বিবাদে তা ফের সামনে এসেছে। বৃহস্পতিবার এলাকার সাংসদ তথা দলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্র ব্লক কার্যালয় উদ্বোধন করলেন। সেই অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকলেন স্থানীয় বিধায়ক রুকবানুর রহমান। ছিলেন না ব্লকের বিধায়ক- ঘনিষ্ঠ অংশের বেশ কিছু সদস্য। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন যে, লড়াইটা এখন আর বিধায়ক বনাম ব্লক সভাপতির মধ্যে সীমাবদ্ধে নেই। সেটা কার্যত বিধায়ক বনাম সাংসদের হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি এখানে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন করতে এসেছিলেন মহুয়া মৈত্র। দলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে বৈঠকের পর তিনি এই কার্যালয় উদ্বোধন করতে এলে প্রবল আপত্তি জানান রাজীব শেখ-সহ বিধায়ক-ঘনিষ্ঠেরা। তাঁদের প্রবল আপত্তির সামনে পিছু হটতে বাধ্য হন মহুয়াদেবী। তিনি জানান যে, সামনের ২৭ ফেব্রুয়ারি এই কার্যালয় উদ্বোধন করবেন। তখন বেঁকে বসেন জেবের অনুগামীরা। তাঁরা ওই দিনই কার্যালয় উদ্বোধনের দাবি জানিয়ে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। কিন্তু রাজীবদের প্রবল চাপের কাছে শেষ পর্যন্ত হার স্বীকার করে ফিরে আসতে হয় মহুয়াদেবীকে।

তিনি জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার আবার কার্যালয় উদ্বোধনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে চাপড়া বিধানসভা এলাকায় প্রায় ২৮০টি বুথের কর্মীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। সেই বৈঠকেও দেখা যায়নি রুকবানুর রহমানকে। অনুপুস্থিত থাকতে দেখা যায় তাঁর অনুগামী বুথ সভাপতিদের একটা বড় অংশকে।

২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার চাপড়া বাজারে জেবের শেখকে পাশে নিয়ে মহুয়াদেবী ব্লক কার্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সেখানে দেখা গেল না বিধায়ক রুকবানুর রহমান ও তাঁর অনুগামী ব্লক নেতৃত্বকে। দেখা গেল না ব্লকের কার্যকরি সভাপতি শুকদেব ব্রহ্ম, ব্লকের সংখ্যালঘু সেলের চেয়ারম্যান রাজীব শেখদেরকেও। আবার এত গুরুত্বপূর্ণ দলীয় কর্মসূচিতে বিধায়ক উপস্থিত না-থাকলেও মহুয়াদেবী এক বারের জন্যও তাঁর খোঁজ করলেন না। অনেকেই বলছেন, “সাংসদ বনাম বিধায়কের লড়াইটা বেশ জমে উঠেছে।”

চাপড়া শ্রীনগর মোড়ের কাছে বিধায়কের দফতরের উল্টো দিকে আছে আরও একটা দলীয় কার্যালয়। ২০১১ সাল থেকে সেটাই ব্লক অফিস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে বিধায়ক ঘনিষ্টদের দাবি। বরাবরই সেই কার্যালয় ব্যবহার করে আসছেন জেবের শেখও। বিধায়কের সঙ্গে তাঁর বিবাদ শুরু হওয়ার পরও তাঁকে এই কার্যালয় ব্যাবহার করতে দেখা গিয়েছে। আলাদা করে ব্লক কার্যালয় তৈরির কোনও চেষ্টা দেখা অনেকেই বলছেন যে, মহুয়া মৈত্র জেলা সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই আলাদা ভাবে দলীয় কার্যালয় তৈরির পরিকল্পনা করতে থাকেন জেবের শেখরা। দলেরই কেউ কেউ বলছেন, “আসলে আলাদা করে দলীয় কার্যালয় তৈরির কথাটা জেবের ভাইয়ের মাথায় অন্য কোউ ঢুকিয়েছে। জেবের ভাইকে সামনে রেখে খেলাটা আসলে অন্য কেউ খেলতে চাইছে।” তাদের কথায়, “খেলাটা যেই খেলুক না কেন, সে তিনি যত বড় নেতা নেত্রীই হোন না কেন চাপড়ায় আখেরে তৃণমূলেরই ক্ষতি হচ্ছে।”

মহুয়াদেবী যখন বুথ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে জেবের শেখদের সঙ্গে নিয়ে দলীয় কার্যালয় উদ্বোধনে ব্যস্ত ঠিক তখনই মাত্র প্রায় এক কিমি দূরে শ্রীনগর মোড়ে নিজের কার্যালয়ে বসে রুকবানুর রহমান বলছেন, “কে কোথায় বুথ সভাপতিদের নিয়ে বৈঠক করছেন, কোথায় দলীয় কার্যালয়ের উদ্বোধন করছেন, তা আমি জানি না। আমাকে জানানো হয়নি। দিন কয়েক আগে এক জন শুধু ছোট্ট এসএমএস করে জানিয়েছিল এই কর্মসূচির কথা।” তিনি বলেন, “আমি এলাকার বিধায়ক শুধু না দলের চেয়ারম্যানও বটে। আমাকে একটা ফোন পর্যন্ত করা হয় নি। এমনকি দলের কোন পদাধীকারীও এসএমএস করে নি। কি করে সেই কর্মসূচিতে যাই বলতে পারেন? তা ছাড়া শরীরটাও ভাল নেই।”

এক সময়ে রুকবানুর রহমানের ডান হাত বলে পরিচিত ছিলেন ব্লক সভাপতি জেবের শেখ। বিষয়টি শুনে জেবের শেখ বলছেন, “কে কী কারণে আসেননি বা এসেছেন সেটা ওঁরাই বলতে পারবেন। তবে আমরা সবাইকেই জানিয়েছিলাম। আমরা চাই সকলে এক সঙ্গে মিলে দলটা করতে।” এ ব্যাপারে ফোন করে পাওয়া যায়নি মহুয়া মৈত্রকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahua Moitra TMC Chapra Rukbanur Rahman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE