জলে ডোবা এক যুবককে ভর্তি করাতে গিয়ে নাকাল হতে হল পুলিশকে। শনিবার সন্ধ্যায় নবদ্বীপ থানার এক এএসআই বছর আঠাশের এক যুবককে জল থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যান। অভিযোগ, সেই সময় নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিত্সক সটান ওই পুলিশকর্মীকে জানিয়ে দেন, “রোগীকে নিয়ে মানসিক হাসপাতালে যান। এখানে এই রোগীর চিকিত্সা করা যাবে না।” তারপর এদিক-সেদিক ঘুরেও হাসপাতাল সুপারের কাছে বিষয়টি জানাতে পারেননি ওই পুলিশকর্মী। শেষমেশ ঘণ্টা দেড়েক পর অন্য এক চিকিত্সক ভর্তির ব্যবস্থা করেন ওই যুবককে।
ঠিক কি ঘটেছিল এ দিন সন্ধ্যায়? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ নবদ্বীপের মহীশুরা পঞ্চায়েতের মাঝেরচরা এলাকার বাসিন্দা মহসিন শেখ, ইনসান শেখ ও অনান্যরা মাঠের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁরা দেখতে পান পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া গঙ্গার জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে এক যুবক। যুবকটি একটি কলাগাছকে অবলম্বন করেছিলেন। তখন ওই চাষিরা জলে ঝাঁপ দেন। মহসিন শেখ বলেন, “জল থেকে তোলার পর বুঝতে পারি ওই যুবক অনেকক্ষণ জলে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কথা বলার মত ক্ষমতা ছিল না ওই যুবকের। তারপর আমরা বিষয়টি পুলিশকে জানাই।”
খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছন নবদ্বীপ থানার এএসআই অসীমকুমার মণ্ডল। তিনি ওই যুবককে উদ্ধার করে সটান চলে যান নবদ্বীপ হাসপাতালে। তখন বাজে বিকেল পাঁচটা। দু’চারটে কথা বলার পরই জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সক নিদান দেন, এ রোগীকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তারপর বিষয়টি হাসপাতালের সুপারকে জানানোর চেষ্টা করেন ওই পুলিশকর্মী। কিন্তু হাসপাতালের কোনও চিকিত্সক বা কর্মীর কাছ থেকে সুপারের সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর জোগাড় করতে পারেননি অসীমবাবু। এ ভাবে ঘণ্টা দেড়েক কেটে যাওয়ার পর অসুস্থ ওই যুবককে নিয়ে থানায় ফিরে যাওয়ার মনস্থির করেন। যাওয়ার আগে তিনি শেষবারের মত ঢু মারেন জরুরী বিভাগে। তখন অবশ্য দায়িত্বে এসেছেন অন্য চিকিত্সক। তিনি ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি তাঁকে ভর্তির ব্যবস্থাও করে দেন।
হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে চিকিত্সা চলছে ওই যুবকের। কিন্তু নাম পরিচয় ঠিকভাবে জানাতে পারছেন না ওই যুবক। ওই যুবক কিছু খেতেও পারছেন না। নবদ্বীপের আইসি তপনকুমার মিশ্র বলেন, “ওই যুবকের ছবি জেলার সব থানায় পাঠানো হচ্ছে। যাতে তাঁর পরিচয় জানা যায়।” হাসপাতালে হয়রানির ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য, “পেশাগত জীবনে এমন হ্যাপা অনেক হয়।”
জরুরী বিভাগের চিকিত্সকের গাফিলতির অভিযোগ প্রসঙ্গে হাসপাতালের সুপার বাপ্পাদিত্য ঢালি বলেন, “অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। ওই চিকিত্সক কেন এটা করেছেন তা খতিয়ে দেখা হবে। কেন আমার নম্বর হাসপাতালের কেউ ওই পুলিশকর্মীকে দেননি তা খতিয়ে দেখব। এটা লজ্জাজনক ব্যাপার। তদন্তে ওই চিকিত্সকের কোনও গাফিলতি প্রমাণিত হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy