Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
অরাঙ্গাবাদ

নালার জল ঠেলে যাতায়াত, বাড়ছে ক্ষোভ

দিনকয়েক আগে নির্মল বাংলা গড়ার প্রশ্নে জার্মানির পরিচ্ছনতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস। অথচ তাঁর নিজের শহর অরাঙ্গাবাদের মানুষকেই মলমূত্রে ভেসে থাকা পথে হাঁটতে হচ্ছে! এক দিন, দু’দিন নয় বছর ঘুরতে চললেও নজর নেই কারও।

নোংরা জলের উপর দিয়ে এ ভাবেই যাতায়াত। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নোংরা জলের উপর দিয়ে এ ভাবেই যাতায়াত। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

দিনকয়েক আগে নির্মল বাংলা গড়ার প্রশ্নে জার্মানির পরিচ্ছনতার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছিলেন সুতির তৃণমূল বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস। অথচ তাঁর নিজের শহর অরাঙ্গাবাদের মানুষকেই মলমূত্রে ভেসে থাকা পথে হাঁটতে হচ্ছে! এক দিন, দু’দিন নয় বছর ঘুরতে চললেও নজর নেই কারও।

অরাঙ্গাবাদ বাজারের প্রধান রাস্তার উপরেই রয়েছে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। প্রসূতি ও শিশুরা সেই পথেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে পরিচ্ছন্নতার পাঠ নিয়ে ফেরেন। কাছেই রয়েছে অরাঙ্গাবাদ ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত ভবন। এমন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার এই রকম অবস্থাকে যেন বিদ্রুপ করছে পথের কোনায় থাকা সাইনবোর্ড। হলুদ বোর্ডটিতে লেখা, ‘২০০৯ সালে নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত হিসাবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছে অরাঙ্গাবাদ।’ পুরস্কার পাওয়া এলাকার এমন হালের দায় কার? এ নিয়ে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে চলছে দায় ঠেলাঠেলির পালা।

অরাঙ্গাবাদ ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত মিলে গড়ে উঠেছে রাজ্যের বিড়ি শিল্পের বৃহত্তম শহর অরাঙ্গাবাদ। পঞ্চায়েত ভোটে ওই দু’টি পঞ্চায়েতে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় নির্দলের প্রতীকে জেতা সদস্যেরা। তাঁরাই দু’টি পঞ্চায়েতের বোর্ড গড়েন। কয়েক মাস আগে নির্দল সদস্যেরা কংগ্রেসে যোগ দেন। ফলে পঞ্চায়েত দু’টি এখন কংগ্রেসের দখলে। অন্য দিকে সুতি বিধানসভা থেকে হাত চিহ্নে লড়ে বিধায়ক হয়েছেন অরাঙ্গাবাদের ভূমিপুত্র ইমানি বিশ্বাস। পরে তিনি দলবদলে তৃণমূলে যোগ দেন। এলাকায় কংগ্রেস-তৃণমূলের রেষারেষিও তুমুল। ভুক্তভোগীদের মত, দু’পক্ষের রেষারেষির জন্যেই সমাধান অধরা রয়েছে।

অরাঙ্গাবাদ বাজারের প্রাণকেন্দ্র ওই সড়কপথের দু’পাশে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে পানীয় জলের দুটি ট্যাপকল ও একটি নলকূপ। ওই রাস্তার পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে অপরিসর, অগভীর নিকাশি নালা। নালার গভীরতা বড়জোর ৬ ইঞ্চি আর চওড়া ৮ ইঞ্চি। সংকীর্ণ ওই নালা পথেই কয়েক’টি বাড়ির শৌচাগারের মলমূত্র আর নলকূপ ও ট্যাপকলের বাড়তি জল গিয়ে পড়ে আধ কিলোমিটার দূরের একটি পুকুরে। পুকুরের মালিক স্থানীয় বাসিন্দা এনতাজ আলি। বছর খানেক আগে এনতাজ তাঁর পুকুরে নিকাশি নালার জল যাওয়া বন্ধ করে দেন। গোল বেধেছে তারপরই। এখন নিকাশির সমস্যা ভয়াবহ আকার নিয়েছে। সরু, অপ্রশস্থ নিকাশি উপছে জল জমছে রাস্তায়। নিকাশিনালাও আবর্জনায় ভরাট হয়ে গিয়েছে। নোংরা জলে ভাসছে রাস্তা।

অরাঙ্গাবাদ ২ নম্বর পঞ্চায়েতের উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রধান স্বাস্থ্যকর্মী সুভদ্রা ধরের অভিজ্ঞতা, ‘‘রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময়ে মোটর বাইক থেকে ছিটকে আসা নোংরা জলে হামেশাই আমাদের ইউনিফর্ম ভিজে যায়। সারাদিন সেই নোংরা নিয়েই কাজ করতে হয়। ওই নোংরা মেখেই প্রসূতি ও শিশুদের নানা ধরণের প্রতিষেধক খাওয়াতে হয়। পঞ্চায়েতে বহু আবেদন করেও সুরাহা হয়নি।’’ ব্যবসায়ী মুজিবর রহমান বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ ছাড়াও প্রতিদিন হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে পথের ওই নোংরা ঘেটে স্কুল কলেজে যেতে আসতে হয়। দু’বার বিডিও-র কাছে, দু’বার বিধায়কের কাছে আবেদন জানিয়েছি। তাঁরা তদন্ত করেছেন। তবু এক বছরেও সুরাহা হয়নি।’’

স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, যাঁদের বাড়ির শৌচালয়ের জল রাস্তায় উপচে পড়ছে তাঁরা বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসের অনুগামী। তাই কংগ্রেস পরিচালিত পঞ্চায়েতের প্রস্তাব মেনে নিকাশি সমস্যা মিটাতে প্রশাসন ও বিধায়ক আগ্রহ দেখাচ্ছে না। অরাঙ্গাবাদ ১ নম্বর পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের কৃষ্ণ দাসের দাবি, ‘‘নিকাশি নালার জল ফেলার মতো কাছেপিঠে সরকারি কোনও গর্ত, বা জলাশয় নেই। সে কারণে রাস্তার নীচেই সোপপিট তৈরি করে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের বিধায়কের অনুগামীরা চড়াও হয়ে সেই কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।’’

কংগ্রেস পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের গাফিলতিতেই নিকাশি সমস্যার সমাধান হয়নি বলে দাবি বিধায়ক ইমানি বিশ্বাসের। তিনি বলেন, ‘‘নিকাশির নোংরা জল ফেলার অন্য কোনও উপায় না থাকায় রাস্তার তলাতেই সোপপিট করে এর সমাধান করতে হবে। বিধায়ক কোটার টাকায় সেই কাজ করা হবে। তার জন্য বিডিও-কে তৎপর হতে বলেছি।’’ কী রকম তৎপরতা দেখিয়েছেন বিডিও? সুতির বিডিও দীপঙ্কর রায় বলেন, ‘‘সোপপিট করার জন্য প্রকল্প তৈরি করা হয়নি।’’ তবে দ্রুত কাজ শুরুর আশ্বাস দেন তিনি।

সব দেখেশুনে ভুক্তভোগীরা বলছেন, না আঁচানো পর্যন্ত ভবি ভুলবার নয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

baharampur Imani Biswas trinamool tmc congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE