ভরদুপুরে খেতেই চলছে আড্ডা। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়
হাতে তেমন কাজ নেই। ধান কাটতেও বেশ ক’দিন দেরি আছে। অলস দুপুরে কিংবা নিঝুম সাঁঝের আড্ডায় ছিটকে আসছে আবদারটা— ‘ও চাচা, আমাদের একটা কাশ্মীরের গল্প বলো না!’’ আবদার ফেরাতে পারছেন না চাচারাও। ম্লান হেসে বলছেন, ‘‘তা বাপ, কেমন গল্প শুনতে চাও, বলো!’’
তার পরে নুর সালাম শুরু করছেন, ‘‘সে এক হুরি-পরির দেশ গো! সাধে কি আর বেহেস্ত বলে! তোমরা ভাবছ, কাশ্মীর মানেই বুঝি জঙ্গি, খুন, রক্ত, সেনার বুলেট। সেটা একটা অশান্ত কাশ্মীরের ছবি। কিন্তু তার বাইরে আরও একটা কাশ্মীর আছে।’’
যা শুনে অবাক হচ্ছে শ্রোতার দল। দিন কয়েক আগে ওই ভূস্বর্গেই জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন বাহালনগরের পাঁচ জন শ্রমিক। তাঁদের দেহ এসেছে বৃহস্পতিবার। তার পর থেকে কাশ্মীরে থাকা অন্য শ্রমিকেরাও ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন।
ইতিমধ্যে গ্রামে ফিরেছেন মেরাজ শেখ, কলিমুদ্দিন শেখ, বশিরুল সরকার, নুর সালাম, আবু বাক্কার, সাদের সরকার, মইনুল হকেরা। শোকস্তব্ধ গ্রাম আস্তে আস্তে ছন্দে ফিরছে। মইনুল বলছেন, ‘‘কাশ্মীর নিয়ে সকলের কৌতূহল ছিলই। এই ঘটনার পরে তা যেন আরও বেড়েছে।’’
বাংলায় অনার্স সমিরুন খাতুন। তাঁর বাবা কলিমুদ্দিন শেখ বাহালনগরে ফিরেছেন দুর্ঘটনার দিন সকালেই। সামিরুন জানতে চেয়েছেন, ‘‘আপেলের তো অনেক দাম। তোমরা সে আপেল খেতে পাও?” মেয়ের প্রশ্ন শুনে হাসতে হাসতে কলিমুদ্দিন উত্তর দিয়েছেন, “গাছ থেকে কুল, আম, লিচু পারার সময় ইচ্ছে করলেই যেমন টুক করে খেতে পারে সবাই, কাশ্মীরে আপেলও তেমন। যত খুশি খাও।”
জঙ্গি হানা থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন বশিরুল সরকার। পরিবারের সঙ্গে তিন দিন কাটিয়ে এখন তিনি অনেকটাই স্বাভাবিক। বশিরুল বলছেন, “কাশ্মীর একটা স্বপ্নের দেশ! কিছু মানুষ সেই স্বপ্নকে হত্যা করছে।’’
ছেলে নুর সালামের কাছে কাশ্মীরের নাজিমুদ্দিনের কথা বার বার জানতে চেয়েছেন মা মানেজা বেওয়া। নুরসালাম বলছেন, “নাজিমুদ্দিনের জন্যই তো এ বার বিমানে বাড়ি ফিরতে পেরেছি। এ বার গেলে ওর মায়ের জন্য কিছু একটা উপহার নিয়ে যাব।” স্ত্রী রেহেনা বিবির আবদার, ‘‘এ বার কিন্তু আমাদেরও বিমানে ওঠাতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy