Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আঁধার পথে রাত জেগেও মিটছে না আধার-যন্ত্রণা

কেউ এসেছেন শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়েই। রাতে সেই শিশু যে মাকে ছাড়া ঘুমোয় না। কেউ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন রাতের খাবার। রাতবিরেতে যদি খিদে পায়। কেউ আবার ব্যাগের মধ্যে ভরে নিয়েছেন মশারি।

রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরের সামনে দীর্ঘ লাইন। ইনসেটে, বহরমপুর ডাকঘরের সামনে শিশুসন্তানকে নিয়েই আধার কার্ড সংশোধন করাবেন বলে রাত জাগছেন হরিহরপাড়ার শর্মিলা বিবি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায় ও ইন্দ্রাশিস বাগচী

রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরের সামনে দীর্ঘ লাইন। ইনসেটে, বহরমপুর ডাকঘরের সামনে শিশুসন্তানকে নিয়েই আধার কার্ড সংশোধন করাবেন বলে রাত জাগছেন হরিহরপাড়ার শর্মিলা বিবি। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায় ও ইন্দ্রাশিস বাগচী

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

কেউ এসেছেন শিশুপুত্রকে সঙ্গে নিয়েই। রাতে সেই শিশু যে মাকে ছাড়া ঘুমোয় না। কেউ সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন রাতের খাবার। রাতবিরেতে যদি খিদে পায়। কেউ আবার ব্যাগের মধ্যে ভরে নিয়েছেন মশারি। চারপাশে ডেঙ্গি হচ্ছে যে! জেলার বিভিন্ন ডাকঘরের সামনে এ ভাবেই রাত জাগছেন মানুষ। কারও চায় নতুন আধার কার্ড। কেউ আবার আধার কার্ডের ভুল সংশোধন করাতে এসেছেন। আধার কার্ড নিয়ে কার্যত চোখে আঁধার দেখছে মুর্শিদাবাদ।

নাগরিকত্ব বিল পাশ হতেই এনআরসি-আতঙ্ক বাড়ছে জেলা জুড়েই। তাই নথি হিসেবে সকলেই চাইছেন নির্ভুল আধার কার্ড। কিন্তু সেই আধার কার্ড নিয়েই যত গোল। কারও জন্মসাল আছে তো তারিখ নেই। কারও বাবার পদবি ‘শেখ’, আধার কার্ডে রয়েছে ‘রহমান’।

বুধবার সেই আধার কার্ডের জন্য কয়েক হাজার মানুষ ভেঙে পড়লেন রঘুনাথগঞ্জ মুখ্য ডাকঘরের সামনে। আর এ দিন লাইন দিয়ে কার্ড সংশোধনের শেষ তারিখ গিয়ে ঠেকল ২০২১ সালের এপ্রিল মাস। এর আগে বিড়ি মহল্লা অরঙ্গাবাদ ডাকঘরে এমনই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পরে অনেককেই শুনতে হয়েছে, ‘‘আপনার কার্ড সংশোধন করানো হবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে। আপনি বরং তখন আসবেন।’’

ডাককর্তারা জানাচ্ছেন, প্রতিদিন ২০টি করে আধার কার্ডের কাজ হওয়ার কথা রঘুনাথগঞ্জ ডাকঘরে। কিন্তু লাইন পড়েছে বিশাল। তাই সকলকে দিন দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সুতির ইন্দ্রনগর কলোনির বাসিন্দা বিলাসী হালদার বলছেন, ‘‘রাতভর লাইনে দাঁড়িয়ে শেষে একটা তারিখ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার নম্বর সংযোজন করতে হবে এ মাসের মধ্যেই। তার কী হবে?’’

মহম্মদ সাবের আলির বাড়ি সুতির ফতেপুরে। ভোর ৩টে থেকে ডাকঘরের সামনে লাইন দিয়ে তিনি তারিখ পেয়েছেন এক বছর পরে। একই অবস্থা ফরিদ শেখ, পঞ্চানন মণ্ডল, পারুল বিবিদেরও। বাহাদিডাঙা থেকে নতুন আধার কার্ড করাতে রঘুনাথগঞ্জ ডাকঘরে লাইন দিয়েছিলেন অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া মরিয়ম খাতুন। কন্যাশ্রীর ফর্ম পূরণ করতে আধার কার্ড লাগবে। তার কথায়, “বাড়ির সকলের আধার কার্ড হয়ে গিয়েছে। শুধু আমার কার্ডটাই হয়নি। এখন বড় বিপদে পড়েছি।”

জেলার প্রায় ২০টি ডাকঘরে এবং কয়েকটি ব্যাঙ্কে চলছে আধার কার্ডের কাজ। মুর্শিদাবাদ বিভাগের ডাক অধিকর্তা প্রবাল বাগচী বলছেন, “যে ক’টি ডাকঘরে কাজ হচ্ছে তারও অনেকগুলিতেই মেশিন খারাপ। প্রয়োজনের তুলনায় কর্মীসংখ্যাও খুব কম। ডাকঘরের কাজ চালিয়েই আধার কার্ডের কাজ করছেন কর্মীরা।”

লালগোলা, ভগবানগোলা, জিয়াগঞ্জে মেশিনন খারাপ। তাই সেখানে আধার কার্ডের কাজ বন্ধ। বেলডাঙা ডাকঘরের সামনেও ভিড় হচ্ছে খুব।

বুধবার রঘুনাথগঞ্জের পরে বৃহস্পতিবার এমনই লাইন দিয়ে নাম নথিভুক্ত করার কথা রয়েছে ফরাক্কা ডাকঘরে। ইতিমধ্যেই ফরাক্কা থানার পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়েছে। কারণ সেখানেও প্রবল ভিড় হবে। তাই ডাক কর্তৃপক্ষ ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Aadhar Card NRC CAB
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE