পারস্পরিক দূরত্ব মেনে হল ইদ পালন। সোমবার কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
এক দিকে করোনার চোখ রাঙানি, অন্য দিকে বিধ্বংসী আমপানের জের। জোড়া ধাক্কায় নেমে আসা বিপর্যয়ের মাঝেই সোমবার পালিত হল ইদ-উল-ফিতর।
প্রতি বছর সকলে এ দিন ইদগাহের মাঠে মিলিত হন। তবে এ বার ছবিটা ছিল আলাদা। করোনার প্রকোপ রুখতে প্রশাসনের পাশাপাশি ইমামরাও বলেছিলেন, যাতে মাঠে জমায়েত না করে বাড়িতে নমাজ পড়া হয়। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ এক মাস রোজার উপবাস শেষে এ দিন বাড়ির ছাদে, বারান্দায় কিংবা উঠোনে নমাজ পড়লেন মুসলিমরা।
নদিয়া জেলা তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি জুলফিকার আলি খান জানান, করোনা সংক্রমণ রুখতে একসাথে নমাজ না পড়ার জন্য সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়েছিল। সেই মতো ইমামরা মুসলিম সম্প্রদায়ের সকলকে বাড়িতে নমাজ পড়তে অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘‘অধিকাংশ মানুষই বাড়িতে নমাজ পড়েছেন। পাড়ার মসজিদেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়েছে।’’
থানারপাড়ার গমাখালির বাসিন্দা রেবাউল মণ্ডল বলেন, ‘‘এবারই প্রথম আমরা পুরুষ-মহিলা সকলে সপরিবারে বাড়ির উঠোনে নমাজ আদায় করেছি। তাছাড়া এবার পাড়া ভিত্তিক ছোট ছোট জমায়েত করে সকলে নমাজে যোগ দিয়েছিলেন।’’ করিমপুরের একটি জুম্মা মসজিদের সভাপতি রহিম মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশ মেনে এ দিন মুখে মাস্ক পরে ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ইদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনাকে সরিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার প্রার্থনা জানিয়েছেন সকলে।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ইদের আগে পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় তেহট্ট ব্লকের সমস্ত ইমাম ও মসজিদ কমিটির সদস্যদের নিয়ে আলোচনা সভা করা হয়। জমায়েত এড়াতে পারলে মহামারির মোকাবিলা করা সম্ভব, সে কথা বারবার বলা হয়। সেই মতো রবিবারও তেহট্ট ব্লক অফিসে প্রশাসনিক বৈঠক হয় বিভিন্ন মসজিদ কমিটির সদস্যদের নিয়ে। বিভিন্ন মসজিদ কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তেহট্ট এলাকার বেশ কিছু মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নমাজ পড়া হয়েছে। একই ভাবে শান্তিপুর শহর এবং গ্রামাঞ্চলে এ দিন পালিত হয়েছে ইদ। বেশির ভাগ মানুষ মসজিদের বদলে নমাজ পড়েছেন বাড়িতে। শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী তোপখানা মসজিদে এ দিন সকালে হাজির ছিলেন জনা পাঁচেক ব্যক্তি।
তোপখানা মসজিদ কমিটির অন্যতম সদস্য মহিউদ্দীন আহমেদ খান বলেন, ‘‘এই বছর লকডাউনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মানসিক ভাবেও তাঁরা বিপর্যস্ত। জাঁকজমক তাই এবার সে ভাবে নেই।’’ স্থানীয় এক বাসিন্দা আমিজ আলি বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ইদের আনন্দ আগের মতো নেই বললেই চলে। সকালে উঠে বাড়িতে নমাজ পড়ে বাড়ির সকলের সঙ্গে আনন্দ করেছি। অন্য বছর নমাজ সেরে আত্মীয়দের বাড়ি যাই। এ বছর সবই বন্ধ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy