বিক্ষোভ স্কুলে। (ইনসেটে) শিক্ষকের আইবুড়ো ভাত। নিজস্ব চিত্র
একেই বোধহয় বলে পচা শামুকে পা কাটা!
সাধ করে স্কুলের স্টাফরুমে পাত পেড়ে এক সহকর্মীকে আইবুড়ো ভাত খাইয়েছিলেন শিক্ষকেরা। মাধ্যমিকের ফলে ভরাডুবির পরে তা নিয়েই রাগে ফেটে পড়লেন অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্রদের একাংশ। সোমবার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে তাঁরা স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
ক’দিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছিল ছবিটা। দরজা-জানলা বন্ধ স্টাফরুমের টেবিলে কাঁসার থালায় ভাত আর তার চারপাশ ঘিরে কাঁসার বাটি আর টিফিন ক্যারিয়ারের স্টিলের কৌটোয় সাজানো পঞ্চব্যঞ্জন। প্রদীপ জ্বলছে, মোমবাতিও। টেবিলের এক দিকে লাজুক মুখে এক তরুণ। ধান-দুর্বো দিয়ে তাঁকে আশীর্বাদ করা হচ্ছে।
ঘটনাস্থল: চাপড়ার দৈয়েরবাজার বিদ্যামন্দির।
গত বুধবার মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, স্কুলের সাড়ে তিনশো পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১১০ জন ফেল করেছে। গত বছর যেখানে স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর ছিল ৬০১, এ বার তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৫৬১-তে।
অভিভাবক ও প্রাক্তন ছাত্রদের একাংশের অভিযোগ, এক সময় এই স্কুলের পড়াশোনার মান অনেক ভাল ছিল। গত কিছু বছর ধরে অবনতি শুরু হয়েছে। শুধু যে পরীক্ষার ফল খারাপ হচ্ছে তা নয়, সার্বিক পরিবেশ রসাতলে গিয়েছে। স্কুলের স্টাফরুমে আইবুড়ো ভাত খাওয়ানো হিমশৈলের চূড়া মাত্র। এবং শুধু এই এক বারই নয়, গত কয়েক মাসে একাধিক এমন অনুষ্ঠান হয়েছে বলে অভিযোগ।
স্কুলটিতে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২১০০। প্রাক্তন ছাত্র বাপ্পা বিশ্বাস, শঙ্কর বিশ্বাসদের অভিযোগ, স্কুলটিতে এখন নিয়মশৃঙ্খলার কোনও বালাই নেই। ছাত্র ও শিক্ষকদের অনেকেই কোনও নিয়ম মানেন না। পড়াশোনা ঠিকঠাক হয় না। জরুরি প্রয়োজনে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের সঙ্গে দেখা করতে গেলেও আগাম অনুমতি নিতে হয়। নথিপত্র ‘অ্যাটাস্ট’ করাতে সপ্তাহে এক দিনের বেশি যাওয়া যায় না। মনিষীদের জন্মজয়ন্তী পালিত হয় না, কিন্তু স্টাফরুমে শিক্ষকদের আইবুড়ো ভাত হয়।
দৈয়েরবাজার বিদ্যামন্দিরের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক বিকাশ মণ্ডল অবশ্য বলেন, “অভিভাবকদের সঙ্গে দেখা বা নথিপত্র অ্যাটাস্ট না করার অভিযোগ ঠিক নয়।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘সহশিক্ষক বা শিক্ষিকার বিয়েতে স্কুলের সব শিক্ষক যেতে পারেন না। তাই স্কুল ছুটির পরে তাঁরা অনুষ্ঠান করেছেন। তার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার কোন সম্পর্ক নেই। কারও পড়ার ক্ষতি হয়নি।’’
ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের দাবি, স্কুলের অনেক ছাত্রছাত্রী চাকরি পাওয়ার পরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের খাইয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, তাতে যদি কোনও সমস্যা না হয়ে থাকে, আইবুড়ো ভাতে নিয়ে আপত্তি কিসের? তবে সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, ‘‘মঙ্গলবার পরিচালন কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘স্কুলের ভিতরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এমন অনুষ্ঠান কখনই বাঞ্ছনীয় নয়। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ মাধ্যমিকে খারাপ ফলাফলের জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হবে বলেও তিনি জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy