Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে ফেরার গান শুনছে বাম-তৃণমূল

ওঁরা কেউ বাম-তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কেউ বা বিজেপিকে ভোটে জিততে সাহায্য করেছিলেন। এখন তাঁদের অনেকেই মাথা মুড়িয়ে পুরনো জায়গায় ফিরতে চাইছেন। কিন্তু দল কি তাঁদের সেই জায়গা ফিরিয়ে দেবে?

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৯
Share: Save:

পঞ্চায়েত নির্বাচনের রেশ কাটতে না-কাটতেই মোহভঙ্গ। বিশেষ করে হিন্দিবলয়ে ইন্দ্রপতনের পরে।

ওঁরা কেউ বাম-তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কেউ বা বিজেপিকে ভোটে জিততে সাহায্য করেছিলেন। এখন তাঁদের অনেকেই মাথা মুড়িয়ে পুরনো জায়গায় ফিরতে চাইছেন। কিন্তু দল কি তাঁদের সেই জায়গা ফিরিয়ে দেবে?

পোড়াগাছা পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলকে হারাতে বিজেপিকে সাহায্য করেছিলেন সিপিএমের দুই পার্টি সদস্য। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে দলের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটিতে। কিন্তু তাঁদের কোনও ভাবে ক্ষমা করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত এক রকম পাকা। সিপিএম নেতৃত্বের একটা অংশের দাবি, বিজেপির প্রতি ‘মোহভঙ্গ’ হওয়ায় জেলা জুড়ে এমন অনেক কর্মীই ফিরে আসতে চাইছেন।

একই দাবি তৃণমূল নেতাদেরও। তবে এই প্রশ্নে দুই দলের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঘরে ফেরাদের তৃণমূল স্বাগত জানালেও সিপিএম সহজে দরজা খুলতে রাজি নয়। পার্টি সদস্যদের জন্য তো নয়ই।

গত পঞ্চায়েত ভোটে জেলায়, বিশেষ করে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির ফল অপেক্ষাকৃত ভাল। আর সেই সাফল্যের পিছনে সিপিএমের একাংশ এবং তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের হাত ছিল বলে মানছেন দুই দলের নেতারাই। অনেক জায়গায় তৃণমূলের মোকাবিলা করতে বিজেপিকে তলায়-তলায় সমর্থন করেছিলেন সিপিএম নেতা-কর্মীরা। আবার দলে গুরুত্ব হারিয়ে তৃণমূলের অনেক পুরনো নেতা-কর্মীও স্থানীয় নেতৃত্বকে ‘শিক্ষা’ দিতে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়ে যান। বিজেপি তার সুফল ঘরে তুলেছে। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটে স্থানীয় স্তরে এটা সম্ভব হলেও লোকসভা ভোটের বড় ময়দানে কি বিজেপি সেটা ধরে রাখতে পারবে?

অনেকেই কিন্তু মনে করছেন, সেটা বোধহয় সম্ভব হবে না। কারণ তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে বিজেপির প্রতি অনেকের যে আস্থা তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটাই ধাক্কা খেয়েছে তিন রাজ্যে পরাজয়ের পরে। যাঁরা বিজেপিতে আসছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই বিশ্বাস, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকবে। রাজ্যেও তাদের প্রতিপত্তি বাড়বে। মঙ্গলবার তিন রাজ্যে মোদী-শাহ বাহিনীর বড় বিপর্যয়ের পরে সেই বিশ্বাসে কিছুটা হলেও ফাটল ধরেছে। আর সেই জায়গা থেকে ‘ঘরের ছেলের ঘরে ফেরার’ সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সিপিএম ও তৃণমূল নেতারা। দু’দলেরই দাবি, বিজেপিতে যাওয়া বহু নেতা-কর্মী দলে ফিরতে চেয়ে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন।

সে ক্ষেত্রে সিপিএম ও তৃণমূলের অবস্থান কি হবে? সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলছেন, “যাঁরা সুবিধাবাদী অবস্থান থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন, তাঁদের আর দলে নেওয়া হবে না। যাঁরা বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের বিষয়টা বিবেচনা করে দেখা হবে।” সেটা কি পার্টি সদস্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? সুমিতবাবু বলেন, “তাঁদের কথা বিবেচনার মধ্যেই নেই। বিশেষ করে যেখানে আমরা একই কারণে দল থেকে বহিষ্কার করছি।”

সিপিএম কড়া অবস্থান নিলেও তৃণমূল কিন্তু এই প্রশ্নে অনেকটাই নরম। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলছেন, “ভুল বুঝে যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের যদি বোধদয় হয়, তা হলে স্বাগত। বিশেষ করে যে সব পুরনো নেতা-কর্মী দলের দুঃসময়ে লড়াই করেছিলেন, তাঁরা যদি কোনও কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে চলে গিয়ে থাকেন, আমরা তাঁদের মর্যাদা দিয়েই ফিরিয়ে নেব।” সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, “তবে যাঁরা অন্য দল থেকে আসতে চাইছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে গুণমান বিচার করা হবে।”

বিজেপি অবশ্য এই উল্টো স্রোতের কথা মানতে নারাজ। তাদের পাল্টা দাবি, পুরনো দলে ফিরতে চাওয়া দূরের কথা, এখনও দলে-দলে মানুষ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আছেন। বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের কটাক্ষ, “সিপিএম দলটার তো কোনও অস্তিত্বই নেই। আর তৃণমূল নেতাদের লাগামছাড়া দুর্নীতি দেখে মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, তাদের আর রাখবে না। ওই দুই দলের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করছেন আমাদের সঙ্গে। ওরা আগে নিজেদের দলের ভাঙন ঠেকিয়ে দেখাক।”

বাগাড়ম্বরের বাজারে কে কতটা সুবিধা করতে পারে, তা বোঝা যাবে মাসখানেকের মধ্যেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly Election BJP TMC CPIM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE