Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাধা জয় করে এগিয়ে আসছে সাবিত্রী-ফতিমা

প্রবল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রাথমিক থেকে এক-এক করে সিঁড়ি টপকে সাবিত্রী পৌঁছে গিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোড়ায়। পায়ের নীচের অংশ নেই বললেই চলে।

ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন মা। নিজস্ব চিত্র

ছেলেকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন মা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাস। বাস থেকে নেমে টোটো করে কলেজের গেট। সেখান থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজের বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাস ঘরে পৌঁছতে সাবিত্রী সরকারের সময় লাগে প্রায় পঞ্চাশ মিনিট। কিন্তু কলেজে পৌঁছে গেলে আর কোনও সমস্যা নেই। সহপাঠীরা আছেন, স্যরেরা আছেন।

প্রবল শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রাথমিক থেকে এক-এক করে সিঁড়ি টপকে সাবিত্রী পৌঁছে গিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোড়ায়। পায়ের নীচের অংশ নেই বললেই চলে। কিন্তু মাজদিয়া পানশিলার গ্রাম পঞ্চায়েতের খাবড়াডাঙা থেকে ভালুকা হাইস্কুল বা নবদ্বীপ বিদ্যাসাগর কলেজে পৌঁছতে তেমন কোনও সমস্যা হয়নি।

শুধু সাবিত্রী নন। জেলা জুড়ে কয়েক হাজার বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়া প্রাথমিক থেকে কলেজ পর্যন্ত আর পাঁচ জন সাধারণ পড়ুয়ার সঙ্গে পড়াশোনা করছেন। একটা সময় ছিল, যখন বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের সাধারণ স্কুলে ভর্তি করাই যেত না। কিন্ত গত দু’দশকের ক্রমাগত চেষ্টায় সেই বাধা এখন অনেকটাই কমেছে বলে দাবি জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তাদের।

জেলা কর্তারা দাবি করছেন, প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত যে কোনও স্কুলে এখন পড়াশোনা করতে পারেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ারা। সর্বশিক্ষা মিশনের হাত ধরে যে কাজ শুরু হয়েছিল এই শতকের গোড়ায়, দু’দশক পেরিয়ে এসে তা অনেকটাই সফল।

শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় মোট ৩৭টি সার্কল আছে। সব ক’টি সার্কেলেই বিভিন্ন স্কুলে সাধারণ পড়ুয়াদের সঙ্গে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়ারা আছে। জেলার আইইডি কো-অর্ডিনেটর স্বপন রক্ষিত জানান, নদিয়ায় বর্তমানে ৮৪১৩ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়ে সাধারণ স্কুলে পড়াশুনো করছে। তাদের মতো করে পড়ানোর জন্য স্কুলের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর আছেন স্পেশ্যাল এডুকেটরেরা।

একটা সময়ে বেশ কিছু স্কুলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের ভর্তি করানো নিয়ে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে শিক্ষা দফতরকে। স্বপনের দাবি, ‘‘এখন বহু স্কুলে এমন কিছু প্রশিক্ষিত শিক্ষক আছেন যাঁরা কোনও অংশে স্পেশ্যাল এডুকেটরদের থেকে কম যান না।”

জেলার এক স্পেশ্যাল এডুকেটর শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, “আসলে, প্রতিবন্ধকতা নানা রকমের হয়। বহু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, সাধারণ পড়ুয়াদের সঙ্গে থেকে ওরাও অনেক উন্নতি করেছে। যেমন, আমঘাটার ফতিমা খাতুন এবং গঙ্গাবাসের বিশাল শেখ। এরা স্কুলে আসার আগে যা ছিল, এখন তার সঙ্গে মেলাতে পারেন না ওদের বাড়ির লোকেরাই। সমস্যা যে একেবারে নেই, তা বলব না। তবে আগের চেয়ে অনেক কম।”

নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গোয়েলের দাবি, “আমাদের জেলায় ভাল কাজ হয়েছে। ওঁরা আরও কিছু সাহায্য চেয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”

সাবিত্রী বলে, “স্কুলে এখন সমস্যা তেমন নেই। অসুবিধা হয় বাসে-ট্রেনে যাতায়াতে। বাসে নিতে চায় না। এমন ব্যবস্থা চাই, যাতে আমাদের কেউ ‘না’ বলতে না পারে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Physically disabled Children Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE