Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

কাউকে বাইকে যেতে দেখেছ?

বিশ্বজিৎদের কথা অনুযায়ী, দুই ডাকাত তাদের বলেছিল, ব্যাঙ্কে বোমা রাখা হয়েছে। একটু বেগড়বাই করলে রিমোটের সাহায্যে তা তারা ফাটিয়ে দেবে। গোটা বাড়িটাই উড়ে যাবে। তাতে ভয় পেয়ে তাঁরা আর কিছু করতে পারেননি। কার্যত বিনা বাধায় টাকা নিয়ে ডাকাতেরা চলে যায়। তারা চলে যাওয়ার পরে দুই কর্মী নিজেরা বাঁধন খুলে সুটরায় সমবায়ের প্রধান শাখা অফিসে খবর দেন। সেখান থেকে কর্মীরা এসে পুলিশে অভিযোগ করেন। 

এই ব্যাঙ্কেই হয় ডাকাতি। নিজস্ব চিত্র

এই ব্যাঙ্কেই হয় ডাকাতি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাকদহ শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০২:২০
Share: Save:

ভরদুপুরে সমবায় ব্যাঙ্কের সামনে হতভম্ব মুখে দাঁড়িয়েছিলেন পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই মিনতি পাল।

ব্যাঙ্কের ঝাঁপ ফেলা।

মিনতি বলেন, ‘‘এখানে আমার আর মেয়ের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গত রাতে জামাইয়ের কাছে শুনলাম, ডাকাতি হয়েছে। সারা রাত দুশ্চিন্তায় কাটিয়েছি। অনেক কষ্টে জমানো টাকা চলে গেলে কষ্টের সীমা থাকবে না।”

কারা করল ডাকাতি?

স্থানীয় সূত্রের খবর, রবিবার বিকেল ৫টা ১০ নাগাদ দুই যুবক ব্যাঙ্কে ঢোকে। তাদের মাথায় হেলমেট ছিল, মুখে বাঁধা ছিল ‘মাস্ক’। ভিতরে ছিলেন শাখা ম্যানেজার বিশ্বজিৎ কুন্ডু এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মী শঙ্কু সরকার। তাঁরা জানিয়েছেন, দুই যুবকের এক জন আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে শঙ্কুকে বেঁধে বিশ্বজিৎকে লকার খুলতে বলে। প্রথমে লকারের যে অংশে টাকা কম ছিল, তিনি সেটা খুলেছিলেন। তারা বলে, ‘এটা নয়, অন্য দিকটা খোল।’ ম্যানেজার সেই অংশটা খুললে তার ভিতর থেকে সব টাকা বের করে একটি ব্যাগে ভরে ফেলে তারা। পরে বিশ্বজিৎকেও বেঁধে ফেলে।

বিশ্বজিৎদের কথা অনুযায়ী, দুই ডাকাত তাদের বলেছিল, ব্যাঙ্কে বোমা রাখা হয়েছে। একটু বেগড়বাই করলে রিমোটের সাহায্যে তা তারা ফাটিয়ে দেবে। গোটা বাড়িটাই উড়ে যাবে। তাতে ভয় পেয়ে তাঁরা আর কিছু করতে পারেননি। কার্যত বিনা বাধায় টাকা নিয়ে ডাকাতেরা চলে যায়। তারা চলে যাওয়ার পরে দুই কর্মী নিজেরা বাঁধন খুলে সুটরায় সমবায়ের প্রধান শাখা অফিসে খবর দেন। সেখান থেকে কর্মীরা এসে পুলিশে অভিযোগ করেন।

চাকদহ ব্লক অফিসের উল্টো দিকে চাকদহ-বনগাঁ রাস্তা থেকে একটু ভিতরে বাঁ দিকে ওই সমবায়ের দোতলা অফিস। বছর তিনেক আগে এখানে কাঠা তিনেক জমি কিনে বাড়ি তোলা হয়েছে। এত নিঃশব্দে গোটা ঘটনা ঘটেছে যে, কেউই টের পাননি।

স্থানীয় বাসিন্দা সুব্রত দে ওরফে বাপ্পা বলেন, “আমি ওই সময়ে বাঙ্কের সামনেই ছিলাম। কোনও শব্দ পাইনি। অন্য জায়গা থেকে লোকজন আসার পরে শুনি সমবায়ে ডাকাতি হয়েছিল।’’ ব্যাঙ্কের লাগোয়া একটি বাড়িতে কাজ করছিলেন কয়েক জন নির্মাণ কর্মী। তারা বিন্দুবিসর্গ টের পাননি। তাঁদের এক জন বলেন, “আমরা দেড় মাস ধরে এই বাড়িতে কাজ করছি। আমরা পাঁচ জন কাজ করছিলাম। এত বড় ঘটনা ঘটল, কিন্তু আমরা কিছুই জানতে পারলাম না! কিছু ক্ষণ পর নীচে তাকিয়ে দেখি, ভিড় জমে গিয়েছি। নীচে নেমে শুনি, সমবায় ব্যাঙ্কে ডাকাতি হয়েছে।” স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানের কর্মী খোকন দে-র কথায়, “উপর থেকে নীচে এসে শঙ্কু আমায় বলে, ‘মামা, কাউকে মোটরবাইক নিয়ে যেতে দেখেছ?’ সত্যিই, ও নামার আগেই ব্যাঙ্কের সামনে দিয়ে এক জন বাইক নিয়ে বনগাঁর দিকে গিয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Loot bank Investigation Bike Rider
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE