Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

বাবুলালের ফোন আদৌ বেজেছিল?

তদন্তকারীদের প্রশ্ন: বাড়ি ছাড়িয়ে বাপুজিনগরের দিকে কোথায় গিয়েছিলেন বাবুলাল? কারও সঙ্গে দেখা করেছিলেন? করলে কার সঙ্গে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি বলে পুলিশ মনে করছে।  

এই দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন বাবুলাল। ছবি: প্রণব দেবনাথ

এই দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন বাবুলাল। ছবি: প্রণব দেবনাথ

সম্রাট চন্দ
তাহেরপুর শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪২
Share: Save:

তিন দিন কেটে গেলেও বাদকুল্লায় সিপিএম কর্মী খুনের ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। পরিবার ক্ষুব্ধ, খুনের কার্যকারণ নিয়ে বাড়ছে ধোঁয়াশাও। একটি ফোন পেয়ে তিনি চায়ের দোকান থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন বলে যে শোনা গিয়েছিল, তারও প্রত্যক্ষদর্শী মিলছে না।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বাড়ির কাছেই পাঁচবেড়িয়া বাজারে প্রতি দিন না হলেও প্রায়ই সন্ধ্যা নাগাদ যেতেন বাবুলাল বিশ্বাস। তবে খুব বেশি সময় সেখানে থাকতেন না। গত শনিবার সন্ধ্যাতেও তিনি সেখানে একটি চায়ের দোকানে গিয়ে কিছুক্ষণ বলেন। এর পরে সেখান থেকে বেরিয়ে যান। কিন্তু বাজার থেকে বেরিয়ে তিনি সোজা বাড়ি যাননি।

এর কিছু পরেই বাদকুল্লা-হাঁসখালি রাস্তায় বাবুলালকে গুলি করা হয়। ওই রাস্তায় বাদকুল্লার দিক থেকে এগোলে আগে পাঁচবেড়িয়া বাজার, তার পরে বাগদিপাড়া। আরও কিছুটা গেলে বাপুজিনগর। বাবুলাল বাগদিপাড়া ছাড়িয়ে বাপুজিনগরের দিকে এগিয়ে গিয়েছিলেন। তদন্তকারীদের প্রশ্ন: বাড়ি ছাড়িয়ে বাপুজিনগরের দিকে কোথায় গিয়েছিলেন বাবুলাল? কারও সঙ্গে দেখা করেছিলেন? করলে কার সঙ্গে? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি বলে পুলিশ মনে করছে।

খুনের পরের দিন, গত রবিবার বাবুলালের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছিল, বাজারে বসেই একটি ফোন পেয়ে বেরিয়ে যান বাবুলাল। কিন্তু তাঁর ফোনের ‘কল রেকর্ড’ ঘেঁটে তার প্রমাণ পাননি তদন্তকারীরা। তাকে ফোনে কথা বলে বেরিয়ে যেতে দেখেছেন, এমন প্রত্যক্ষদর্শীও এখনও সামনে আসেননি।

মঙ্গলবার বাবুলালের ভাই দেবাশিস বলেন, “দাদা যখনই বাড়ি থেকে বেরোত, সঙ্গে কাউকে নিয়ে যেত। বাড়ির আর পাড়ার বড়রাই বলত কাউকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। কিন্তু শনিবার সন্ধায় বেরনোর সময়ে বলে যায়, ‘এখনই আসছি, কাউকে যেতে হবে না’।” তদন্তকারীদের প্রশ্ন: সে ক্ষেত্রে কি আগে থেকেই বাবুলালের ইপরে নজর রেখেছিল আততায়ীরা? সে দিন একা পেয়ে যাওয়ায় তাদের সুবিধা হয়। সেই সন্দেহও দৃঢ় হচ্ছে পরিবারের। নির্দিষ্ট করে সঞ্জিত ঘোষ এবং তার ছেলেদের বিরুদ্ধেই পুলিশে অভিযোগ জানানো হল কেন?

দেবাশিস বা বাগদিপাড়ার বাসিন্দা স্মরজিৎ বিশ্বাসদের দাবি, “বাবুলাল অনেক সময়ে সঞ্জিত-সহ অনেকের নানা অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। বাবুলালের জন্য তারা বাগদিপাড়া এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। এই কারণে তাদের আক্রোশ ছিল।” তবে সেই আক্রোশের কারণেই এই খুন কি না, তদন্তকারীরা সেই বিষয়ে নিশ্চিত নয়। বিশেষ করে যেহেতু সঞ্জিত দিন পঁচিশ আগেই সপরিবার নাগপুর গিয়েছে।

কিন্তু এখনও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ বাড়ছে। দেবাশিস বলেন, “পুলিশ অপরাধীদের ধরছে না। অপরাধীদের আড়াল করতে চাইছে।” সিপিএমের তাহেরপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুপ্রতীপ রায় বলেন, “আমরা ৭২ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু অপরাধী গ্রেফতার হচ্ছে না। ১৬ তারিখ দলের উচ্চতর নেতৃত্ব আসছেন। সে দিনই পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে জানিয়ে দেব।” রাতে রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভিএসআর অনন্তনাগ শুধু বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Badhulla Murder CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE