Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উতেরা-খুনে নজরে তিরিশ

প্ল্যাকার্ডে নিহত উতেরা বিবির ছবি। হাতে-হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি। অনেকেরই মুখে কালো কাপড়। নারী পাচারকারী সন্দেহে তিন ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাকে খুন করার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন কয়েক হাজার মানুষ।

প্রতিবাদ।  সেকেন্দ্রায় গণপ্রহারে মৃত্যুর প্রতিকার চেয়ে মিছিল রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

প্রতিবাদ। সেকেন্দ্রায় গণপ্রহারে মৃত্যুর প্রতিকার চেয়ে মিছিল রঘুনাথগঞ্জে। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়

বিমান হাজরা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৩:০৮
Share: Save:

প্ল্যাকার্ডে লেখা— “ ‘‘পুলিশ তুমি কোথায় ছিলে, উতেরা বিবিকে মরতে দিলে!”

প্ল্যাকার্ডে নিহত উতেরা বিবির ছবি। হাতে-হাতে জ্বলন্ত মোমবাতি। অনেকেরই মুখে কালো কাপড়। নারী পাচারকারী সন্দেহে তিন ঘণ্টা ধরে পিটিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাকে খুন করার প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন কয়েক হাজার মানুষ।

কে ছিল না সেই মিছিলে?

কিশোর সামিম আখতার থেকে সত্তর বছরের সাত্তার শেখ একযোগে পা মিলিয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুর শহর ঘুরে থানার পাশ দিয়ে মিছিল গিয়ে থামে সদরঘাটে। তাতে পুলিশের উপরে চাপ বেড়েছে, সন্দেহ নেই। যদিও রাত পর্যম্ত পুলিশ এই খুনে জড়িত আর কাউকে ধরতে পারেনি।

এখনও পর্যন্ত যে ১০ দশ জনকে গ্রেফাতর করা হয়েছে, তার মধ্যে তিন জন— পরেশ সাহা, রাজকুমার ঘোষ ও আজিজুল শেখকে দু’দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। রঘুনাথগঞ্জ থানার আইসি সৈকত রায় বলেন, “গণপিটুনির সময়ে সকলে ঘটনাস্থলে ছিল। এক জন মহিলার চুল কেটেছে। আরও অন্তত ৩০ জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। ফুটেজের ছবির সঙ্গে তাদের নাম মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ ধরা হচ্ছে না কেন? আইসি-র দাবি, ‘‘গত তিন দিন ধরে পুলিশ ওই গ্রামে হানা দিচ্ছে। কিন্তু অভিযুক্তেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না।”

গত মঙ্গলবার সকালে রঘুনাথগঞ্জে বাংলাদেশ সীমান্তের সেকেন্দ্রা গ্রামে গণপিটুনি দেওয়া হয় বছর চল্লিশের উতেরা বিবিকে। ইদে তিনি কৃষ্ণশাইল থেকে পানানগরে বাপের বাড়িতে এসেছিলেন। সোমবার রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ঘুরতে-ঘুরতে চলে যান মাইল দুই দূরে সেকেন্দ্রায়। সেখানে দিলীপ ঘোষ নামে এক জনের বাড়ির দাওয়ায় তাঁর মেয়ের পাশে শুয়ে পড়েন। ওই গ্রামে কিছু দিন আগেই এক কিশোরী রাতে উধাও হয়েছে। অতএব উতেরাকে নারী পাচারকারী বলে সাব্যস্ত করে পরিত্যক্ত ট্রাক্টরের সঙ্গে বেঁধে মারধর শুরু হয়।

কিছু দিন আগে পর্যন্তও সেকেন্দ্রা বিশেষ সুবিধের জায়গা ছিল না। পদ্মার চর পেরোলেই বাংলাদেশ। বোমাবাজি, চোরাপাচারের রমরমা ছিল। মাটিতে পুঁতে রাখা বোমা উদ্ধার করতেও হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। তাই দীর্ঘদিন ধরেই গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। তা সত্ত্বেও টানা তিন ঘণ্টা ধরে মারধর করা হয়েছে উতেরাকে। পরে পুলিশ উদ্ধার করে তাঁকে জঙ্গিপুর হাসপাতালে পাঠালে সেখানেই তিনি মারা যান।

এ দিন সেকেন্দ্রায় গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকা পুরুষশূন্য। মহিলারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ঘটনাস্থলে পরিত্যক্ত ট্রাক্টরটি পড়ে রয়েছে। বেলা ৯টাতেও রাস্তায় প্রায় বন্‌ধের চেহারা। প্রতি দিনই নাকি পুলিশ হানা দিচ্ছে। রোজকার মতোই আইসি বলেন, ‘‘দোষীদের কাউকে ছাড়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE