Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪
প্রাণে বাঁচল জখম যুবক

রক্ত দিয়ে ওসির মুশকিল আসান

তাঁর ভয়ে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায় না। কিন্তু তাঁর থানা এলাকাতে হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোর আগে লোকে দশ বার ভাবে! সেই তিনি বৃহস্পতিবার রাতে শোনেন, বাইক দুর্ঘটনায় একজন মারা গিয়েছেন আর একজন জখম। এবং দু’জনের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না।

সমিত তালুকদার

সমিত তালুকদার

সেবাব্রত মুখোপাধ্যায়
বেলডাঙা শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:০০
Share: Save:

তাঁর ভয়ে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায় না। কিন্তু তাঁর থানা এলাকাতে হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালানোর আগে লোকে দশ বার ভাবে!

সেই তিনি বৃহস্পতিবার রাতে শোনেন, বাইক দুর্ঘটনায় একজন মারা গিয়েছেন আর একজন জখম। এবং দু’জনের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। তিনি দেরি করেননি। সটান থানা থেকে বেরিয়ে প্রথমে যান ঘটনাস্থল ও পরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আবার আর এক বিপত্তি।

জখম যুবকের এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত দরকার। কিন্তু ব্লাড ব্যাঙ্কে সেই গ্রুপের রক্ত নেই। উপায়? মুশকিল আসান করে দেন সেই তিনিই—বেলডাঙা থানার ওসি সমিত তালুকদার। তাঁর নিজের রক্তের গ্রুপও যে এ পজিটিভ! চিকিৎসকেরা আর দেরি করেননি। ওই যুবকের রক্তের ব্যবস্থা হতেই হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন তাঁর বাড়ির লোকজন ও চিকিৎসকেরা। তবে সমিতবাবু বলছেন, ‘‘ও ব্যাটা আগে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুক। তার পর ওকে থানায় ডেকে হেলমেটের পাঠ দেব।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে সারগাছি গিয়েছিলেন বেলডাঙার কুমারপুর গ্রামের প্রসেনজিৎ মণ্ডল (২৬) ও প্রতাপ মণ্ডল। দু’জনের মাথাতেই হেলমেট ছিল না। ফেরার পথে বাইকের গতিও ভাল ছিল। কিন্তু রাস্তায় একটি গর্তের পাশ দিয়ে যেতে গিয়ে বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। দু’জনেই নীচে পড়ে যান। ঘটনাস্থলে মারা যান প্রসেনজিৎ।

খবর পেয়ে ছুটে আসে সারগাছি ফাঁড়ির পুলিশ। গুরুতর জখম অবস্থায় তারা প্রতাপকে উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সমিতবাবু হাসপাতালে গিয়ে শোনেন, প্রতাপের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় শুয়ে আছেন হাসপাতালে। সেখানেই তিনি জানতে পারেন হাসপাতালে এ পজিটিভ গ্রুপের রক্ত নেই। তারপরে নিজেই রক্ত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার রক্তের সমস্যা ছিল। পরে তা মিটেও গিয়েছে।

তবে প্রতাপের বাড়ির লোকজনের কথায়, ‘‘ওসি না থাকলে ছেলেটা আর বাঁচত না।’’ শুক্রবার হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে প্রতাপ বলছেন, ‘‘ওই ওসির ভয়ে বেলডাঙায় কেউ হেলমেট না পরে বাইক চালানোর সাহস দেখায় না। কাল খুব তাড়া থাকায় হেলমেট নেওয়া হয়নি। আর তারই মাসুল দিতে হল। তবে সমিতবাবুর কাছে আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকলাম।’’

আর সমিতবাবু বলছেন, ‘‘ছেলেটার ওই মুহূর্তে রক্তের প্রয়োজন ছিল। গ্রুপ মিলে যাওয়ায় দিয়েছি। এটা এমন কিছু বড় ব্যাপার নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE