Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রাতে বাড়ি ঢুকে টাকা লুঠ, অভিযুক্ত পুলিশ

গভীর রাতে দুই গ্রামবাসীর বাড়িতে ঢুকে টাকা ‘লুঠের’ অভিযোগ উঠেছে মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। রানিতলার সরলপুর পঞ্চায়েতের দেবাইপুর গ্রামের বাসিন্দা হাইরুল শেখের বাড়ি থেকে ৩০ হাজার এবং তপন দত্তের বাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা পুলিশ নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

শুভাশিস সৈয়দ
রানিতলা  শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:৪৫
Share: Save:

গভীর রাতে দুই গ্রামবাসীর বাড়িতে ঢুকে টাকা ‘লুঠের’ অভিযোগ উঠেছে মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার পুলিশের বিরুদ্ধে। রানিতলার সরলপুর পঞ্চায়েতের দেবাইপুর গ্রামের বাসিন্দা হাইরুল শেখের বাড়ি থেকে ৩০ হাজার এবং তপন দত্তের বাড়ি থেকে ১৫ হাজার টাকা পুলিশ নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

ওই দুু’জনের দাবি, ঘটনাটি ৭ মার্চ রাতের। যদিও তাঁরা মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপারের কাছে পৃথক ভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন ১৯ তারিখে। অভিযোগে রানিতলা থানার ওসি সালাম শেখ ও সাব-ইন্সপেক্টর বিনয় সরকারের নাম রয়েছে। তাঁরা দু’জনেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেছেন, “ওই দু’জনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের ভিত্তিতে গোটা বিষয়টি তদন্ত করার জন্য লালবাগের এসডিপিও-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে, অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেও জুয়া খেলার অভিযোগ রয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানান। প্রকৃত ঘটনা জানতে মঙ্গলবার দেবাইপুরের ওই দুই বাসিন্দাকে ডেকে পাঠান এসডিপিও (লালবাগ) আজহার আলি তৌফিক।

হাইরুল শেখের দাবি, তাঁর স্ত্রীর নামে থাকা তিন শতক জমি ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। উদ্দেশ্য ছিল, কলকাতায় নিয়ে গিয়ে স্ত্রীকে ডাক্তার দেখানো। অন্য দিকে, নতুন দেবাইপুরের পুকুরিয়া মৌজায় ১০ কাঠা জমি ১ লক্ষ টাকায় তিনি ও তাঁর দাদা অরুণ দত্ত ছ’মাস আগে বিক্রি করেন বলে দাবি তপনের। লিখিত অভিযোগে হাইরুল দাবি করেছেন, ৭ তারিখ (শনিবার) রাত ১২টা নাগাদ থানার মেজবাবু বিনয় সরকার তাঁর বাড়িতে ঢুকে তোশক-বিছানা তুলে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। হাইরুলের অভিযোগ, “খাটের নীচে রাখা বাক্সে জমি বিক্রির ৩০ হাজার টাকা ছিল। বাক্স খুলে ওই টাকা বের করে নিয়ে চলে যাওয়ার সময়ে আমাকেও থানায় ধরে নিয়ে যান ওই পুলিশ অফিসার। গ্রেফতারের কারণ জানতে চাইলে আমাকে লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। পরে থানায় নিয়ে গিয়ে আমাকে লক-আপে আটকে রাখা হয়। সেই সোমবার (৯ মার্চ) জামিন পাই।” তাঁর স্ত্রী সুন্দরা বিবি বলেন, “পুলিশের কাছে অনেক মিনতি করা সত্ত্বেও কোনও কথা কানে তোলেনি।” হাইরুলের আইনজীবী ইকবাল হোসেন বলেন, “গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধৃতকে আদালতে হাজির করানোটাই নিয়ম। পুলিশ এক্ষেত্রে তা করেনি কেন?”

রানিতলা থানা সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ৮ তারিখ রাত ১টা নাগাদ দেবাইপুর প্রাথমিক স্কুল চত্বরে জুয়া খেলার আসর থেকে গ্রেফতার করা হয় হাইরুল শেখকে। সেই অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও রুজু হয়। নিয়মমাফিক ৯ তারিখ লালবাগ আদালতে তোলা হলে হাইরুল জামিন পান। জুয়ার ঠেক থেকে ৪১২৫ টাকা বাজেয়াপ্ত হয় বলেও পুলিশের দাবি।

৭ তারিখ রাতেই হাইরুলের বাড়ি থেকে শ’তিনেক মিটার দূরে তপন দত্তের বাড়িতেও পুলিশ যায় বলে অভিযোগ। তপনবাবুর অভিযোগ, “আমি ঘুমিয়েছিলাম। ঘরের দরজা খোলা ছিল। ভিতরে ঢুকে থানার মেজবাবু লাঠির গুঁতো দিয়ে আমাকে ঘুম থেকে তোলেন। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লাঠি দিয়ে তোশক উল্টে তার তলায় রাখা জমি বিক্রির ১৫ হাজার টাকা নিয়ে চলে যান। যাওয়ার সময়ে পর দিন সকালে থানায় দেখা করার কথা বলে যান।” তপন জানান, পরের দিন থানায় গেলে প্রায় তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করানোর পরে সাদা কাগজে তাঁকে দিয়ে সই করিয়ে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে বলে পুলিশ।

পুলিশের আবার দাবি, তপন দত্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯০ ধারায় (জনবহুল এলাকায় অশালীন বা অভব্য আচরণ) জামিনযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছিল। ৮ তারিখ তাঁকে থানায় দেখা করতে বলা হয়। সে দিনই থানা থেকে ব্যক্তিগত বন্ডে তাঁকে ছাড়া হয়।

কিন্তু, প্রশ্ন উঠেছে, ৭ তারিখে ঘটনা ঘটলেও কেন ১২ দিন পরে অভিযোগ করলেন ওই দু’জন? তপন ও হাইরুলের বক্তব্য, “ঘটনার পরে বারকয়েক থানায় টাকা ফেরত চাইতে গেলেও খেদিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পরে আর ভয়ে থানামুখো হতে পারিনি। স্থানীয় নেতাদের সাহায্যে পুলিশের নিয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারের চেষ্টা করি। কিন্তু, পুলিশ টাকা দেয়নি।” ওই দু’জনকে ১৯ মার্চ এসপির কাছে নিয়ে যান ভগবানগোলা ২ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ আলমগীর। তিনি বলেন, “ওই দুই গ্রামবাসী এলাকায় নিবির্বাদী হিসাবে পরিচিত। পুলিশের খাতায় অভিযোগ নেই। তবু পুলিশ কেন ওঁদের বাড়িতে হানা দিল, তা স্পষ্ট হওয়া দরকার। টাকা লুঠ হয়ে থাকলেও সেটাও উদ্ধার করা দরকার।” একই সঙ্গে তাঁর ক্ষোভ, এসডিপিও অভিযোগকারীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। অভিযুক্ত পুলিশ আধিকারিকদের ডাকার প্রয়োজন মনে করেননি। এসডিপিও এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE