বিয়ে-নয়: নাবালিকার বাড়ির লোকেদের বোঝাচ্ছেন বিডিও। নিজস্ব চিত্র
মেয়েটার জন্মদিন। অথচ সেটা বেমালুম ভুলে বসেছিলেন বাড়ির লোকজন। উল্টে তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন নাবালিকা মেয়েকে সংসারের পাঠ দিতে।
কেউ বলেছেন, ‘‘আজ বাদে কাল তোর বিয়ে। এখনও নিজের চুল বাঁধতে শিখলি না?’’ মা বলেছেন, ‘‘কিছু রান্না অন্তত এই ক’দিনে শিখে নে। নইলে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে যে মুখ পোড়াবি!’’ গোমড়া মুখে মেয়ে বলছে, ‘‘বিয়েটা তো পরেও হতে পারে। তোমরা মাধ্যমিকটাও দিতে দেবে না?’’
সে কথায় কেউ কান দেননি। বরং ছিটকে এসেছে বিদ্রুপ, ‘‘কেন লেখাপড়া শিখে কি দেশ উদ্ধার করবে?’’
সোমবার, নিজের জন্মদিনেও মুখ ভার করে বসেছিল মেয়েটি। ঠিক সেই সময়েই একটি গাড়ি এসে থামল বাড়ির দরজায়। বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার বাড়িতে ঢুকলেন নওদার বিডিও লিটন সাহা। কী হয়, কী হয় মুখ করে একচিলতে উঠোনে তখন ভিড় জমিয়েছেন পড়শিরাও।
নওদার ডাঙাপাড়া মোক্তারপুর হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর বাবা আইনুল শেখ প্রথমে অবশ্য বিয়ের কথা অস্বীকার করেন। বিডিও তখন বলেন, ‘‘তথ্য যাচাই করে এখানে এসেছি। আপনি জোর করে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। বিয়েটা বন্ধ না করলে কিন্তু আপনাকে জেল খাটতে হবে। আমি কি পুলিশকে ব্যাপারটা দেখতে বলব?’’
এর পরে আর কথা বাড়াননি আইনুল। তিনি কবুল করেন, দিন কয়েকের মধ্যেই তিনি তাঁর নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছিলেন। পরে তিনি মুচলেকা দেন, মেয়ে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত তিনি বিয়ে দেবেন না। বিডিও তাঁকে বোঝান, ‘‘আপনার মেয়ে তো দু’বছর পরে কন্যাশ্রীর ২৫ হাজার টাকা পাবে। তখন সেই টাকায় সে আরও লেখাপড়া শিখতে পারবে। তারপরে না হয় বিয়ে দেবেন।’’
শনিবার মোক্তারপুর স্কুলে কন্যাশ্রী নিয়ে একটি সচেতনতা শিবিরে যান বিডিও লিটন সাহা। ফেরার পথে তিনি ওই নাবালিকার বিয়ের কথা জানতে পারেন। তারপর এ দিন সটান মেয়েটার বাড়িতে চলে আসেন। ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে বন্ধ হয়েছে। ফের পড়াশোনাও করতে পারবে সে। উচ্ছ্বসিত ওই ছাত্রী বলছে, ‘‘জন্মদিনে এর থেকে ভাল উপহার আর কী হতে পারে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy