Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

মৃত্যুতে স্তব্ধ বিয়ে, দায়িত্ব নিল পুলিশ

বিয়ে দেওয়া পুলিশের কাজ নয়, দেয়ও না। কিন্তু দুর্ঘটনায় বাড়ির এক জনের মৃত্যু, আর এক জন গুরুতর জখম হওয়ার জেরে ভেস্তে যেতে বসা বিয়ের দায়িত্ব নিল পুলিশই।

খুন্তি নাড়লেন পুলিশকর্মীও। —নিজস্ব চিত্র।

খুন্তি নাড়লেন পুলিশকর্মীও। —নিজস্ব চিত্র।

বিমান হাজরা
ফরাক্কা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০১:৫৩
Share: Save:

পুলিশ প্রায়ই বিয়ে আটকায়। নাবালিকার বিয়ে।

বিয়ে দেওয়া পুলিশের কাজ নয়, দেয়ও না। কিন্তু দুর্ঘটনায় বাড়ির এক জনের মৃত্যু, আর এক জন গুরুতর জখম হওয়ার জেরে ভেস্তে যেতে বসা বিয়ের দায়িত্ব নিল পুলিশই।

সোমবার রাতে ঝাড়খণ্ড লাগোয়া সুদনা গ্রামে যখন বিয়ের তোড়জোড় চলছে, বাড়ির কাছেই লরির ধাক্কায় মারা যান কনের জেঠিমা লতা মণ্ডল (৬২)। গুরুতর জখম হয়ে আর এক আত্মীয় মল্লিকা মণ্ডল মালদহের এক নার্সিংহোমে ভর্তি।

এই অবস্থায় বিয়ে হবে কী করে? দুর্ঘটনার খবর পৌঁছে যায় ১৫ কিলোমিটার দূরে নয়নসুখে পাত্রের বাড়িতেও। দুই বাড়িতেই সকলে ধরে নেন, বিয়েটা এ যাত্রা হচ্ছে না। কিন্তু হাল ধরেন ফরাক্কা থানার আইসি উদয়শঙ্কর ঘোষ, সঙ্গী বিডিও কেশাং ধেনডুপ ভুটিয়া। রাতেই তাঁরা পৌঁছে গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে। ততক্ষণে কয়েক জন আহতদের নিয়ে রওনা দিয়েছেন হাসপাতালে। মৃতদেহ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য থানায় পাঠানো হয়েছে। বিয়েবাড়ির হইচই বদলে গিয়েছে কান্নায়।

বিডিও-র পরামর্শেই আইসি কনের বাবা-মাকে প্রস্তাব দেন, বিয়ের দায়িত্ব তাঁরাই নেবেন। অনেক দ্বিধা, মতাম্তর, কথাবার্তার পরে শেষ রাতে স্থির হয়, পুলিশের আয়োজনেই বিয়ে হবে। মঙ্গলবার ফরাক্কা বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে আয়োজন হয়। সুদনা থেকে দুপুরে নিয়ে আসা হয় পাত্রী শম্পা, তার মা-বাবা, ভাই-দিদিদের। রান্নার ব্যবস্থা হয় ফরাক্কা থানার পাশেই পুলিশের মেস লাগোয়া উঠোনে।

বরযাত্রী নিয়ে শ’খানেক লোকের আয়োজন। মেনু বলতে ডাল, বেগুন ভাজা, পাঁচ তরকারি, মাছ, মাংস, চাটনি, পাঁপড়, দই আর মিষ্টি। শেষে মিঠে পান। বিডিও-র গাড়ির চালক গোপাল চক্রবর্তী, আইসি-র গাড়ির চালক প্রদীপ রায়ের কাজে লেগে পড়েন। ষষ্ঠীসুন্দর, মিঠুন, অচিন্ত্য ঘোষের মতো পুলিশ ও সিভিক কর্মীরাও হাত লাগান। কেউ যান মাংস আনতে, কেউ যান ফুলের জোগাড় করতে। মহিলা পুলিশকর্মী ওমশ্রী রাইয়ের উপরে ভার পড়ে কনে সাজানোর জিনিস খুঁজে আনার।

এনটিপিসি-র এক সংস্থায় কাজ করেন বিকাশ মণ্ডল। তাঁর দায়িত্ব ছিল নয়নসুখ থেকে বরযাত্রীদের নিয়ে আসার। সন্ধেতেই তাঁরা এসে হাজির হয়ে যান। নিমন্ত্রিতের তালিকায় ছিলেন ফরাক্কার স্কুলের অধ্যক্ষ, স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক, বাহাদুরপুর গির্জার পাদ্রি, স্থানীয় মসজিদের দুই ইমামও। বিকাশ বলেন, ‘‘পুলিশ ও প্রশাসন পাশে না দাঁড়ালে বিয়েটা এ বার হতোই না।’’

বিয়ের আসরে বসেও চোখের জল বাঁধ মানছিল না শম্পার। তাঁর মা অর্চনা বলেন, ‘‘মেয়ের ভাগ্য সত্যি ভাল। না হলে কাল যা ঘটেছে, তার পরে বিয়ের কথা আমরা ভাবতেও পারছিলাম না!’’ বিডিও আর আইসি বলেন, ‘‘দুঃসময়ে যে ওঁদের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, এই ভাল লাগাটুকুই আমাদের পাওনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Death Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE