Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নিকাশি বেহাল, জমা জলে বাড়ছে ক্ষোভ

সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। সেই নোংরা জলকাদা মাড়িয়ে পথ চলাই দায় হয়ে পড়ে। বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে তহ বাজার, চিত্রটা কমবেশি সব জায়গাতেই এক। চাপড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেহাল নিকাশির কারণেই এমন ভোগান্তি। এ দিকে বর্ষাও দোরগোড়ায়। কিন্তু নিকাশির হাল ফেরাতে এখনও প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে ফি বছরের মতো এ বারেও যে ভোগান্তির বর্ষাযাপন থেকে রেহাই মিলছে না, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত চাপড়ার সিংহভাগ বাসিন্দা।

আবর্জনায় ভরেছে নিকাশি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

আবর্জনায় ভরেছে নিকাশি। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

সুস্মিত হালদার
চাপড়া শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০১:৩৭
Share: Save:

সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। সেই নোংরা জলকাদা মাড়িয়ে পথ চলাই দায় হয়ে পড়ে। বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু করে তহ বাজার, চিত্রটা কমবেশি সব জায়গাতেই এক। চাপড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেহাল নিকাশির কারণেই এমন ভোগান্তি। এ দিকে বর্ষাও দোরগোড়ায়। কিন্তু নিকাশির হাল ফেরাতে এখনও প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে ফি বছরের মতো এ বারেও যে ভোগান্তির বর্ষাযাপন থেকে রেহাই মিলছে না, তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত চাপড়ার সিংহভাগ বাসিন্দা।

নদিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চাপড়া। আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ চাপড়ার উপরে নির্ভরশীল। সীমান্ত এলাকা থেকে বহু পরিবার এখন চাপড়ায় উঠে আসার ফলে এই শহরে জনসংখ্যাও বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে চাপড়ার উন্নয়ণ কিন্তু তেমন হচ্ছে না বলেই মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, যে কোনও শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নিকাশি ব্যবস্থা। অথচ চাপড়ার সেই বিষয়টিই সবথেকে অবহেলিত। সামান্য বৃষ্টিতেই এই শহরে জল জমে যায়। ভরা বর্ষায় তা সাঙ্ঘাতিক চেহারা নেয়। জমে যাওয়া সেই জল বের করে দেওয়ার জন্য ন্যূনতম যে পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছিল সেটাও বর্তমানে বেহাল। দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে এলাকার বেশির ভাগ নালা বুজে গিয়েছে। নিকাশির মূল খালটির অবস্থাও তথৈবচ। চাপড়া বাজার এলাকার উপর দিয়ে যে পাকা নালাটি পঞ্চায়েত সমিতি তৈরি করেছিল সেটাও রাস্তা চওড়া করার জন্য বহু জায়গায় ভেঙে ফেলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকার চুলকানি খালটিই চাপড়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম। বিশেষ করে চাপড়া-১ পঞ্চায়েত এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা দাঁড়িয়ে রয়েছে এই খালের উপরেই। কিন্তু কোনও আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করেই সেই খালের ধারে নির্বিচারে বাড়ি তৈরি, নিজেদের প্রয়োজন মতো মাটি ফেলার কারণে সেই খালের অবস্থাও জীর্ণ। বিশেষ করে চাপড়া বাজার এলাকার যে জল এত দিন একটি কালভার্টের তলা দিয়ে গিয়ে বিলে পড়ত, নাগাড়ে মাটি ফেলায় নিকাশির সেই পথটুকুও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

চাপড়া এলাকার হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক রফিকুল ইসলাম জানান, অপরিকল্পিত ভাবে বাড়ি ঘর তৈরির ফলে প্রাকৃতিক যে নিকাশি ব্যবস্থা ছিল তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আর পরবর্তীতে যে নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা একেবারেই কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই। আর তার ফল ভুগতে হচ্ছে চাপড়ার মানুষকে। বিশেষ করে বাসস্ট্যান্ড এলাকা, শ্রীবাসপল্লি, সর্দারপাড়া-সহ শ্রীনগর-কুমোরপাড়া এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। চাপড়া বাজার এলাকায় যে সব নালা তৈরি হয়েছিল দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে তা প্রায় বুজে গিয়েছে। সেই নালা থেকে জল উপচে পড়ে রাস্তায়।

চাপড়া-বাঙালঝি বাজার উন্নয়ন কমিটির সম্পাদক দেবদাস বিশ্বাস জানান, বর্ষায় চাপড়া বাজারের যা চেহারা হয় তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। নালা উপচে জল চলে আসে রাস্তায়। সেই নোংরা জল মাড়িয়েই যাতায়াত করতে হয় নিত্যযাত্রী থেকে শুরু করে, বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতা সকলকেই। তিনি বলেন, ‘‘২০০৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে একটা নালা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সংস্কারের অভাবে সেটাও প্রায় বুজে এসেছিল। তারপর রাস্তা চওড়া করার জন্য সেটাও বেশ কিছু জায়গায় বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। এ বারের বর্ষায় যে কী হবে সেটা ভেবেই ভয় হচ্ছে।’’

স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতির জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের বহু বার জানিয়েও কোন ফল হয়নি। চাপড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের মৃণালকান্তি তরফদার বলেন, ‘‘আমরাও চাই চাপাড়ার নিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি করতে। তা নিয়ে আমাদের বেশ কিছু পরিকল্পনাও আছে।’’ কিন্তু সেই পরিকল্পনার বাস্তব রূপায়ণ কবে হবে তা অবশ্য জানা নেই চাপড়ার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE