শীর্ণ হয়েছে জাতীয় সড়ক: রেজিনগরের ছেতিয়ানিতে। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা সরু হয়ে উঠেছে, পাড় ভাঙছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুর্ঘটনা— প্রশ্ন করলে জাতীয় সড়ক কর্তপক্ষের বাঁধা জবাব ফিরছে, ‘সম্প্রসারণের কাজ চলছে, দেখছেন না!’
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে, রেজিনগরের ছেতিয়ানি থেকে মরাদিঘি— দু’কিলোমিটারে রাস্তাটা এখন তাই দুর্ঘটনার আঁতুরঘর।
পুলিশের হিসেব বলছে, গত এক বছরে বড়-মেজ মিলিয়ে ওই পরিসরে দুর্ঘটনার সংখ্যা ২৭। মৃত্যুর সংখ্যা ১০। আহত অন্তত ৩৯।
রেজিনগর থেকে বেলডাঙা হয়ে বহরমপুর যাওয়ার বেশির ভাগ রাস্তা চার লেনে সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু জমি জটের কারণে ছেতিয়ানি থেকে মরাদিঘি হয়ে দাদপুর ভাঙাসাঁকো— জাতীয় সড়কের এই অংশ এখনও সংকীর্ণ। পাশপাশি দু’টো বড় গাড়ি যাওয়ার জায়গা নেই। রাস্তার পাশে গর্ত। সেখানে গাড়ি নামাতে গেলে উল্টে যাওয়া প্রায় নিত্য ঘটনা।
সেই অসম্পূর্ণ রাস্তার কোথাও মাটি, কোথাও বালির স্তূপ। পড়শি মানুষজন সেই অপরিসপর রাস্তাতেই কোতাও শুকোচ্ছেন পাট কোথাও গম। ফলে গাড়ি থেকে বাস, দুর্ঘটনার ইশারা নিয়ে দুরুদুরু বুকে পার হচ্ছেন ওই দু’কিলোমিটার পথ।
গত তিন মাস জেলা পুলিশের উদ্যোগে তাই রাতভর ওই পথে মাইকে ঘোষণা করে চলেছে পুলিশ— সাবধানে গাড়ি চালান, ওভারটেক করার চেষ্টা করবেন না।’
রেজিনগর থানার ওসি এলাকার স্কুল গুলিতে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ক্লাস করাচ্ছেন। রাস্তার দু’ধারে সচেতন করতে লাগানো হয়েছে বোর্ড।
সেখানে সবুজ বোর্ডে লেখা, দুর্ঘটনা প্রবণ এলাকা, গাড়ি আস্তে চালান। কোথাও লেখা, সরু রাস্তা, গাড়ি ধীরে চালান। মানুষকে সচেতন করার হাজারো রকমফের।
কিন্তু যে রাস্তায় এই বোর্ড সেই রাস্তার পাশে গর্ত। এই রাস্তায় বেশ কয়েকটি বেষ্টনী বসান হয়েছে। সেখানে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছেন সিভিক ভলান্টিয়ার।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাত শেখ বলছেন, ‘‘মোটর বাইক নিয়ে ওই রাস্তায় কত বার যে মাথা ফাটল, পা ভাঙল তা গুনে শেষ করা যাবে না! ’’
ওই পথে রোজ স্কুল-যাত্রা দাদপুর হাইস্কুলের শিক্ষক আসাদুল্লা মল্লিকের। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘আমি রোজ বেলডাঙা থেকে ওই পথে রোজ স্কুলে যাই। ছেতিয়ানি এলেই চোখ বন্ধ করে ফেলি। ওই দু’কিলোমিটার রাস্তা চোখ খুলতে সাহস হয় না। বাসটা এমন দুলতে থাকে মনে হয় এখনই বুঝি রাস্তার পাশে পাকা ফলের মতো টুপ করে খসে পড়ব।’’
দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, ‘‘রাস্তা সরু হওয়ার কারণে ওই এলাকায় দুর্ঘটনা বেড়েছে। দুর্ঘটনা কমাতে পুলিশ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ওই এলাকার বেশ কিছু স্থানে স্পিড ব্রেকার লাগানো হয়েছে। বাড়তি সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশ কর্মী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ নিয়মিত মাইকিং করছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদেরও কিছু দায় আছে। তাঁদের আরও সচেতন হতে হবে ওই পথে চলাচলের সময়ে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy