Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Current theft

আঁকশি দিয়ে ‘কারেন্ট’ পাড়ে ওরা

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার লোকজন অভিযান শুরু করলেই মুহূর্তে মিলিয়ে যায় সেই সব রংবেরঙের আঁকশি। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের দাবি, চুরি আগের থেকে কমেছে। কিন্তু একেবারেই বন্ধ হয়নি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বিমান হাজরা ও সামসুদ্দিন বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৮
Share: Save:

চোখে দেখা যায় না। কিন্তু চুরি হয়ে যায়। এর মধ্যে কোনও ধাঁধা নেই। কথা হচ্ছে বিদ্যুৎ নিয়ে। গাঁ-গঞ্জে অবশ্য সেই অদৃশ্য ক্ষমতা ‘কারেন্ট’ বা ‘পাওয়ার’ নামেই বেশি পরিচিত। তারের মাধ্যমে পরিবাহিত হয় সেই ‘কারেন্ট’। আর প্রকাশ্যে চুরি যায় আঁকশির মাধ্যমে।

কোনটা কার আঁকশি?

প্রশ্ন শুনে হেসে ফেলছেন আঁকশির মালিকেরা। ভাবখানা এমন যে, অন্য কিছু নিয়ে হাজার দ্বন্দ্ব-গন্ডগোল-মতান্তর থাকলেও এই ব্যাপারে বিবিধের মাঝে মহামিলন।

বিদ্যুতের তার থেকে ঝুলছে নারকেলের খোল, প্লাস্টিকের মগ, গ্লাস, জর্দার কৌটো। বিকেলের পরেই যেন রামধনু লেপ্টে থাকে বিদ্যুতের তারে। বেগুনি, নীল, আকাশি, সবুজ, হলুদ, কমলা, লাল— এমন সব রঙেই চেনা যায় কোনটা কার আঁকশি।

বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার লোকজন অভিযান শুরু করলেই মুহূর্তে মিলিয়ে যায় সেই সব রংবেরঙের আঁকশি। বিদ্যুৎ দফতরের কর্তাদের দাবি, চুরি আগের থেকে কমেছে। কিন্তু একেবারেই বন্ধ হয়নি।

সম্প্রতি নদিয়ার নাকাশিপাড়ায় এসেছিলেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। সেখানে তিনিও জানান, বিদ্যুৎ দফতরকে না জানিয়ে অনেকেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। যার ফলে ট্রান্সফর্মারে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। কখনও কখনও তা পুড়ে যাচ্ছে। হচ্ছে লোডশেডিং।

বিদ্যুৎ চুরি রুখতে জেলা জুড়ে তিনটি দলের লাগাতার অভিযান চলছে। গত এক মাসে শতাধিক মামলাও রুজু হয়েছে পুলিশের কাছে। তবুও চুরিতে লাগাম টানা যায়নি। দিন কয়েক আগে সুতির ডাঙাপাড়ায় হানা দেয় বিদ্যুৎ দফতরের বিশেষ দল।

সেই দলের এক কর্তার কথায়, ‘‘দিনদুপুরে একাধিক বাড়িতে হুকিং করে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছিল। হাতেনাতে ধরা হয়েছে। সকলেই গ্রামের প্রভাবশালী লোক। কেউ বাড়িতে, কেউ আবার চাষের জমিতে সেচের জন্য হুকিং করেছিলেন। তিন জনের কাছ থেকে প্রায় ৮০ ফুট তার মিলেছে যা হুকিং করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছিল। তাদের বিরুদ্ধে সুতি থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।’’

যত দিন যাচ্ছে বিদ্যুৎ চুরির কায়দাও বদলে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির সামনে দিয়ে বিদ্যুতের তার থেকে হুকিং নতুন কিছু নয়। ১১ হাজার ভোল্টের লাইন থেকে বিদ্যুৎ চুরি করতে গোপনে ট্রান্সফর্মার বসানোর নজিরও রয়েছে। সেই ট্রান্সফর্মার থেকে বাসিন্দারা গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেছে। বছর দু’য়েক আগে বড়ঞার একটি গ্রামে গ্রামে ১০০ কেভি-র ট্রান্সফর্মার ছিল। সেখানে কয়েকটি ট্রান্সফর্মার পুড়ে যায়। গ্রাম বিদ্যুৎহীন থাকায় স্থানীয় কিছু লোকজন গ্রামের পাশ দিয়ে যাওয়া ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতের লাইন থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে আসে। রমরমিয়ে ব্যবসাও শুরু করে কয়েক জন। মাসে একটি বাল্ব জ্বালানোর জন্য ৫০ টাকা, একটি পাখা চালানোর জন্য ১০০ টাকা করে বিলও নিত উদ্যোক্তারা। পরে বিদ্যুৎ দফতরের লোকজন অভিযান চালিয়ে সেই চুরি বন্ধ করে। গ্রামে বসানো হয় নতুন ট্রান্সফর্মার।

(তথ্য সহায়তা: কৌশিক সাহা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Power Theft Sovandeb Chattopadhyay Power Hooking
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE