এই ভাতের মধ্যেই লুকানো আছে পেঁয়াজ। নিজস্ব চিত্র
এক টুকরো কাঁচা পেঁয়াজই এখন মানুষকে চিনিয়ে দিচ্ছে, এ জগতে কে আপন আর কে পর।
শান্তিপুরে ডাকঘর মোড়ের এক হোটেলে এক টুকরো কাঁচা পেঁয়াজ এক থালা ধোঁয়া ওঠা ভাতের মধ্যে লুকিয়ে টেবিলে রেখে, বহু দিনের পরিচিত খদ্দেরের কানে কানে ফিসফিসিয়ে হোটেল মালিক বললেন, ‘‘শুধু আপনার জন্যই। একটু লুকিয়ে খাবেন। নইলে সবাই চেয়ে বসবে!’’ ততক্ষণে পিছনের টেবিলের এক জন পেঁয়াজ চেয়ে নিরাশ হয়েছেন। একটু আড়াল করে পেঁয়াজে ছোট্ট কামড় দিয়ে পুরনো খরিদ্দারের উপলব্ধি, ‘একেই বলে ভালোবাসা!’
পেঁয়াজের যা দাম বেড়েছে, ক্রেতা বিক্রেতা সবাই বুঝছেন, এখন বিনা পয়সায় পেঁয়াজ দেওয়া প্রায় অসম্ভব। পাইস হোটেলে গিয়ে কাঁচা পেঁয়াজ চাইতে সঙ্কোচ হচ্ছে ক্রেতাদেরই। ভুল করে কেউ চেয়ে বসলে বাকিরা এমন ভাবে তার দিকে তাকাচ্ছেন, যেন সে অন্য কোনও গ্রহের জীব বা বড়সড় কোনও অপরাধ করে বসেছে। ঘুঘনি থেকে চপ, কোনও কিছুর সঙ্গেই কাঁচা পেঁয়াজ মিলছে না। তার বদলে ছড়ি ঘোরাচ্ছে কুচো শশা।
কিন্তু দুধের স্বাদ কি আর ঘোলে মেটে? ঘটিগরম, ঝালমুড়িতে পেঁয়াজ হাওয়া। ঝালমুড়িতে যা-ও বা আছে বুড়ি-ছোঁয়া, ঘটিগরমওয়ালা পেঁয়াজের বদলে দিচ্ছেন ভরসা—‘‘আরে, চাপ নেই দাদা! জলপাই কুচি আর কাঁচা পেঁপে কুচির সঙ্গে বেশি করে মশলা মেখে দিলে বুঝতেই পারবেন না কী দিচ্ছি, আর কী খাচ্ছেন!’’ রেস্তরাঁও বেহালও একই রকম। বিরিয়ানির সঙ্গে চাকা-চাকা করে কাটা শশা। বাট নো পেঁয়াজ। খরিদ্দার ধরে রাখতে চিলতে পেঁয়াজ দিচ্ছেন বটে কেউ কেউ, কিন্তু তা যেন জীববিদ্যার ক্লাসে পেঁয়াজের প্রস্থচ্ছেদের মতোই ফিনফিনে। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নীচে ধরলেই কোষ-কলা সব এক্ষুনি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। হাত উল্টে দোকানি বলছেন, ‘‘উপায় নেই দাদা, এ ভাবেই ম্যানেজ করতে হচ্ছে।’’
তা বটে! পেঁয়াজের কেসটা এখন ঘরে-বাইরে ‘ম্যানেজ’ করেই চলছে। তাই চার টুকরো পেঁয়াজ নিপুণ হাতের কারসাজিতে ছ’টুকরো হয়ে যাচ্ছে। কেটারারেরা আগে যেখানে স্যালাডে শশা-পেঁয়াজ দিতেন ফিফটি-ফিফটি, এখন পেঁয়াজের স্মৃতিগন্ধ নিয়ে শশার অকাতর সবুজ বিপ্লব।
কাঁচা পেঁয়াজ ছাড়া তরকা মানে চিনি ছাড়া চায়ের মতোই। সেখানেও দুটোর জায়গায় একটা ছোট পেঁয়াজ। একটার বেশি চাইতে গেলে করজোড়ে দোকানির উত্তর, ‘‘দু’টুকরো আপেল চাইলে তা-ও চেষ্টা করে দেখতে পারি, পেঁয়াজ পেরে উঠছি না।’’ পাড়ার ঠেকে যে যার মতো গল্প দিচ্ছে। কেউ বলছে, বাংলাদেশ থেকে প্লেনে পেঁয়াজ আসছে। দু’চারটে দিন একটু কষ্ট করো! কেউ আবার শুনে এসেছে, দাগাবাজ প্রেমিকাকে বশে আনতে নাকি শিকড়-বাকড় বাদ দিয়ে স্রেফ পেঁয়াজের টোপ দিচ্ছে মরিয়া প্রেমিক। কে আবার এই দেখে এল, পুলিশ এসকর্ট দিয়ে এক গাড়ি পেঁয়াজ বাজারে আনা হচ্ছে। হেসে উড়িয়ে দিলে হবে না! বিড়িতে এক টান মেরে বিশু খুড়ো বলছে, ‘‘হাসছ, হেসে নাও। এমন দিন এল বলে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy