Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Madrasa

উন্নয়নের কথা বলে তোলা চাঁদার হিসেব নিয়ে প্রশ্ন

কাটাকোপরা এলাকার একটি মাদ্রাসার কমিটির সদস্য জান মহম্মদ মণ্ডলের কথায়, ‘‘চাঁদা থেকে পাওয়া টাকার হিসেব যেমন অনেক পুজো কমিটি রাখে না, তেমন অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও রাখেন না। তাঁদের মাদ্রাসার নাম ব্যবহার করে ক’টি কুপন ছাপা হয়েছে, তার বিনিময়ে কত টাকা তোলা হয়েছে, তার কোনও হিসেব অনেক ক্ষেত্রেই নেই।

প্রতীকী চিত্র

প্রতীকী চিত্র

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০০
Share: Save:

ডোমকলের বেশ কয়েকটি মাদ্রাসার উন্নয়নের নাম করে বেসরকারি ভাবে টাকা তোলার প্রবণতা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। এনআইএ জেলা থেকে যে ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে, তাদের অন্যতম আল মামুন কামাল এমনই একটি অনুমোদনহীন মাদ্রাসা চালাতেন। সেই মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য কুপন কেটে চাঁদা তুলত। কেরল থেকেও চাঁদা তোলা হত। আল মামুনের ঘটনা সামনের আসার পরেই চিন্তা বেড়েছে। যেমন, ঘোষপাড়া সর্বপল্লি বিদ্যানিকেতনের প্রাক্তন প্রধানশিক্ষক বাইজিদ হোসেন বলেন, ‘‘কেউ বিশ্বকর্মা পুজো বা দুর্গা পুজোর নাম করে চাঁদা তোলে। কেউ মহরম বা মাদ্রাসার নাম করে চাঁদা তোলে। সেই টাকার উপরে কারও কোনও নজরই নেই। সেই টাকা কোন খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে, তা কে বলবে? তাই উদ্বেগ তো হয়ই।’’

জলঙ্গি চোঁয়াপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের রাকিবুল ইসলামের কথায়, ‘‘ভয় তো সবাই পাচ্ছি। যাকে নিরীহ মানুষ বলে ভাবতাম, তাকেই এনআইএ তুলে নিয়ে গেল জঙ্গি বলে। তাই সব কাজই এখন সন্দেহের চোখে দেখতে হচ্ছে। বিশেষ করে টাকা পয়সার লেনদেন যদি স্বচ্ছ ভাবে না হয়, তা হলে তা উদ্বেগের কারণ। কিন্তু অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষই কুপন দিয়ে চাঁদা তোলার ক্ষেত্রে কত টাকা পেলেন, তার হিসেব রাখেন না। বাকি টাকা কোথায় গেল, তা-ও জােনন না।’’ রাকিবুল বলেন, ‘‘মঙ্গলবারই অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁরাও ভয় পেয়েছেন। কেননা, অনেক মাদ্রাসাই রাজ্য শিক্ষা দফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে। সেখানে টাকাপয়সার হিসেব ঠিকঠাক রয়েছে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে।’’ জেলা ইমাম মুয়াজ্জিম সংগঠনের অন্যতম কর্তা নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘‘গ্রামেগঞ্জে অনেক মাদ্রাসা সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলে। সেই সব মাদ্রাসার উন্নয়নের নাম করে কুপন কেটে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়। কিন্তু সেই চাঁদার টাকা কতটা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের হাতে যায়, আর কতটা অন্য কোনও হাতে চলে যায়, তা নিয়ে আমাদের ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। কেননা, এই ধরনের মাদ্রাসাগুলো তাদের অডিটও করায় না। এই অডিট করাতেই হবে বলে মনে করি।’’ কাটাকোপরা এলাকার একটি মাদ্রাসার কমিটির সদস্য জান মহম্মদ মণ্ডলের কথায়, ‘‘চাঁদা থেকে পাওয়া টাকার হিসেব যেমন অনেক পুজো কমিটি রাখে না, তেমন অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষও রাখেন না। তাঁদের মাদ্রাসার নাম ব্যবহার করে ক’টি কুপন ছাপা হয়েছে, তার বিনিময়ে কত টাকা তোলা হয়েছে, তার কোনও হিসেব অনেক ক্ষেত্রেই নেই। তাতেই সন্দেহ গাঢ় হয় যে, কিছু টাকা হয়তো এমন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ চান না।’’

জলঙ্গির বাসিন্দা আব্দুর রশিদ শেখের কথায়, ‘‘মাদ্রাসার জন্য তোলা চাঁদার টাকা দিয়ে কেউ যদি অসহায় কোনও রোগীকে সাহায্য করেন, বা কোনও দরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়ান, তা হলে তেমন কিছু বলার নেই। যদিও সে কাজও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে বলেই করা উচিত, কারণ টাকাটা তাঁদের নামেই উঠছে। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে তাঁদের নাম ব্যবহার করে কেউ যদি চাঁদা তুলে সে টাকা অন্যায় ভাবে ব্যবহার করেন, তা হলে শাস্তি হওয়া উচিত।’’ বিভিন্ন গ্রামের পঞ্চায়েত কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অনুমোদন নেই এমন মাদ্রাসার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতেরও বেশি কিছু করার নেই। আর কেউ যদি চাঁদা তোলেন, তাতেও বাধা দেওয়ার এক্তিয়ার নেই। পঞ্চায়েত প্রধান রাকিবুল বলেন, ‘‘নানা সময়েই এই ভাবে চাঁদা তোলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু সেই প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষগুলোর উচিত নিয়মিত অডিট করা। তা হলেই এমন অস্বস্তিকর প্রশ্নের মুখে আর পড়তে হয় না।’’ জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এই ব্যাপারে তারা খোঁজ খবর করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Madrasa Scam Domkol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE