Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রামমন্দির নিয়ে কথা নয় ভোটে

তবে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার দাবি করেন, “রামচন্দ্র আমাদের জাতীয় পুরুষ। আগেও কোনও দিন আমরা তাঁকে ভোটের লড়াইয়ের সঙ্গে জড়াইনি, এ বার উপ-নির্বাচনেও জড়াব না। এতে আমাদের কোনও লাভ হবে কি না, সে হিসাবও আমরা করছি না।” 

মন্দির চত্বরে হনুমানদের ভুরিভোজ। নিজস্ব চিত্র

মন্দির চত্বরে হনুমানদের ভুরিভোজ। নিজস্ব চিত্র

স্মিত হালদার ও কল্লোল প্রামাণিক
করিমপুর শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪০
Share: Save:

আপাতত সাবধানী সব পক্ষই। ভোটে এ সব নিয়ে তারা প্রচার চালাবে না, এমনটাই সিদ্ধান্ত বিজেপির। কিন্তু তা বলে প্রভাব কি পড়বে না? অযোধ্যা মামলার রায় করিমপুর উপ-নির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে সব দলই হিসেব কষছে।

রাম জন্মভূমি আন্দোলনের ঢেউয়ে চেপেই এক সময়ে সাধারণ নির্বাচনে নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছিল বিজেপি। করসেবকদের মূল স্লোগানই ছিল ‘মন্দির ওহি বানায়েঙ্গে’, যার পরিণতিতে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ভেঙে দেওয়া হয় বাবরি মসজিদ। এখন সুপ্রিম কোর্ট বিতর্কিত জমির মালিকানা ‘রামলালা বিরাজমান’-কে দিয়ে দেওয়ায়, সেই রাজনীতি‌ই কার্যত মান্য পেয়েছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিদের অধিকাংশই। রায়ের পরে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সাধারণ নেতাকর্মীদের সংযত থাকার বার্তা দিয়েছেন। নদিয়ার নেতারাও বলছেন, এই রায়কে কোনও ভাবেই ভোটের প্রচারে ব্যবহার করা হবে না। কিন্তু বিরোধীদের আশঙ্কা, প্রকাশ্যে না হলেও এ নিয়ে ‘হুইসপারিং ক্যাম্পেন’ করবে বিজেপি।

বুলবুলের মেঘলা আকাশ মাথায় নিয়ে রবিবার কোনও দলই সে ভাবে প্রচারে ঝাঁপায়নি। তবে জেলা বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের সর্বোচ্চ স্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে উপনির্বাচনে রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে ব্যবহার করা যাবে না। সেই নির্দেশ তাঁরা পালন করবেন। কিন্তু জেলা নেতাদেরই কেউ-কেউ জানাচ্ছেন, প্রকাশ্যে না হলেও ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সাফল্য হিসাবে তুলে ধরা হবে। বিজেপির এক জেলা নেতার ধারণা, “করিমপুর উপ-নির্বাচনে এই রায় প্রভাব ফেলবে। হিন্দুরা এই রায়কে দু’হাত তুলে স্বাগত জানিয়েছেন। এবং তাঁরা জানেন, এই সাফল্যের পিছনে আমাদের দলের দীর্ঘ লড়াইয়ের ইতিহাস আছে।”

তবে বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকার দাবি করেন, “রামচন্দ্র আমাদের জাতীয় পুরুষ। আগেও কোনও দিন আমরা তাঁকে ভোটের লড়াইয়ের সঙ্গে জড়াইনি, এ বার উপ-নির্বাচনেও জড়াব না। এতে আমাদের কোনও লাভ হবে কি না, সে হিসাবও আমরা করছি না।”

অন্য দলগুলিও সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে প্রায় একই রকম সাবধানী। যদিও বিজেপির মতিগতি নিয়ে তারা নিঃসন্দেহ নয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র বক্তব্য, “আমরা দেশের ঐক্য ও সংহতির পক্ষে লড়াই করে আসছি। সুপ্রিম কোর্ট দীর্ঘদিনের বিরোধ-বিবাদের মীমাংসা করেছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু প্রশ্ন আছে। কিন্তু তার পরেও আমরা এটাকে ভোটের লড়াইয়ে টেনে আনব না।”

বিজেপির সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে তাঁদের কী ধারণা। সুমিতের দাবি, “বিজেপি আর আরএসএস এটাকে ইস্যু করার চেষ্টা করতে রাকে। তাতে বিশেষ লাভ করতে পারবে না। মন্দির আর মসজিদ তো মূল সমস্যা নয়, মূল সমস্যা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান। এ সব বিষয় সামনে রেখেই আমরা ভোটে লড়ব।” করিমপুরের বাম-কংগ্রেস প্রার্থী, সিপিএমের যুবনেতা গোলাম রাব্বিও বলেন, “পার্টির অবস্থান খুব স্পষ্ট। আমরা কোনও ভাবেই রামমন্দিরের বিষয়টি ভোটের প্রচারে আনছি না।”

এ দিন প্রচারে বেরিয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী বিমলেন্দু সিংহ রায়। তার ফাঁকেই তিনি বলেন, “আমাদের নেত্রী সর্বধর্ম সমন্বয় ও সম্প্রীতির জন্য জীবনভর লড়াই করেছেন। করিমপুর উপ-নির্বাচনেও লড়াই জারি থাকবে। আমরা নিজেরা এটাকে ইস্যু করব না, বিজেপিকেও এ সব করে সম্প্রীতির পরিবেশ নষ্ট করতে দেব না।”

বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি তথা করিমপুরে দলের প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার কিন্তু জোর দিয়ে বলছেন, ‘‘অযোধ্যার রায় নিয়ে এই ভোটে কোনও প্রচার করা হবে না।’’ তবে তাঁর মতে, ‘‘এই রায় ভোটে একটা বড় সূচক হিসেবে কাজ করবে। ভারত দেখিয়ে দিল, দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যাও আইনি পথে নিরসন করা যায়। মোদী-অমিত শাহদের উপরে দেশবাসীর ভরসা আরও বাড়ল।’’

ভোটারদের অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টি এমনিতেই ভীষণ স্পর্শকাতর। বাবরি মসজিদ ভাঙার ফৌজদারি মামলারও এখনও ফয়সালা হয়নি, যে মামলায় এল কে আডবাণী, উমা ভারতী-সহ শীর্ষ বিজেপি নেতারা অভিযুক্ত। তাই বিজেপি এখনই বেড়ে খেলতে চাইছে না। অন্য দলগুলিও জল মাপছে। তাই এখনই করিমপুরের ময়দানে রামলালা নামছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE