পথে-প্রচার: বেলডাঙায়। —নিজস্ব চিত্র।
আন্দামানের হ্যাভলক দ্বীপে যে সুতোয় জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি, উত্তর প্রদেশ-দিল্লি ঘুরে নিজের আপন গাঁয়ে ফিরে এলেও নিজের একান্ত বোধের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া সে সুতোর বাঁধন আর খোলেনি।
এ গ্রাম থেকে পড়শি গ্রাম, কিংবা নিজের আটপৌরে ধূপকাঠির কারবারের স্বার্থে জেলা সদর বহরমপুর— যেখানেই যান কেন, তাঁর চেনা সাইকেলের সামনে জ্বলজ্বল করে, হেলমেটের প্রচার। আর, পাড়া-পড়শির উপহাস, রাস্তার টিটকিরি গা থেকে ঝেড়ে ফেলে ওই সাইকেলেই হেলমেট পরে দিব্যি মাইলের পর মাইল পাড়ি দেন তিনি।
আসুন আলাপ করি, বেলডাঙা এলাকার বাঁশচাতর গ্রামের মধ্য ত্রিশের মনোজিৎ বিশ্বাসের সঙ্গে।
‘‘দিল্লিতে কাজ করার সময় দেখেছিলাম, হেলমেট না পড়ায় আমার খুব পরিচিত এক সহকর্মীকে কি ভাবে অকালে চলে যেতে হল। উত্তরপ্রদেশেরে গঞ্জেও এরই কারণে হারিয়েছি আমার অন্য এক বন্ধুকে। আর তখনই আমার সামনে ভেসে উঠত আর একটা মুখ।’’
তিনি হ্যাভলক দ্বীপে মনোজিতের হোটেল মালিক। তাঁর প্রথম কর্মক্ষেত্রের অন্নদাতা।
উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে কাজের খোঁজ পেয়ে মাঝারি মানের একটি হোটেলে কাজ নিয়ে চলে গিয়েছিলেন আন্দামানের হ্যাভলক দ্বীপে। মনোজিতৎ বলছেন, ‘‘সেখানে দেখেছি, প্রশাসন যেমন সচেতন তেমনই সচেতন সাধারণ মানুষও। আমার হোটেলের মালিককে খুব কাছ থেকে দেখেছি। দেখেছি সব সময় কেমন হেলমেট পড়তে। হয়তো রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন বা চা খাচ্ছেন, হলমেট খোলেননি।’’
আর তারই উল্টো ছবিটা দেখেছেন উত্তর ভারতে কাজ করতে গিয়ে। ফিরে এসে প্রথম পথটাই বেছে নিয়েছেন মনোজিৎ। পথ নিরাপত্তা সপ্তাহের শোরগোলের মাঝে নিশ্চুপে বেলডাঙা, বহরমপুর, নওদার রাস্তায় হেলমেট পড়েই সাইকেল চালাচ্ছেন তিনি। রাস্তায় হেলমেটহীন চালক দেখলে তাঁদের হাত জোড় করে বোঝাচ্ছেনও। তাঁর সাইকেলের সামনে টিনের উপরে গোটা হরফে লেখা— হেলমেট পড়ে মোটরবাইক চালান।
লোকে দেখে হাসে। কেউ কেউ পাগলও বলে তাঁকে। মনোজিৎ বলছেন, ‘‘এর একটা উল্টো ছবিও আছে জানেন, অনেকে তো আমাকে দেখেই এখন হেলমেট পড়েন। বহরমপুর যেতে গিয়েও দেখি আগের থেকে হেলমেটের ব্যবহার বেড়েছে। আমার এই পাগলামোর জন্য যদি সমাজে একটু সচেতনতা ফেরে, কম কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy