প্রতীকী ছবি।
কেউ ঘুমোলে কেউ জাগে।
নিট ফল, সাতসকালে গৃহস্থের আর্তনাদ, ‘আমার সব শেষ হয়ে গেল গো। হতচ্ছাড়ারা ঘরের সব জিনিসপত্র ঝাঁট দিয়ে নিয়ে গিয়েছে।’
তস্করের তাণ্ডবে রীতিমতো অতিষ্ঠ বহরমপুরের পঞ্চাননতলা লাগোয়া প্রান্তিকপাড়া। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দু’মাসে সাতটি বাড়িতে চুরি হয়েছে।
তা হলে উপায়?
পাড়ার লোকজন সমস্বরে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘প্রয়োজনে পথে নেমে রাতপাহারা দেব। কিন্তু এ ভাবে চোরের দাপট সহ্য করব না।’’
শিক্ষক: ‘এক বার হাতে পাই! উচিত শিক্ষা দিয়ে সোজা শ্রীঘরে পৌঁছে দেব।’
চিকিৎসক: ‘পাড়া থেকে এ রোগ দূর করতেই হবে।’
ব্যবসায়ী: ‘রাতের পর রাত এ লোকসান তো সহ্য করা যায় না!’
পঞ্চায়েত সদস্য: ‘ধরতে পারলে ব্যাটার পরিচয় জানতে দু’মিনিটও লাগবে না। আধার নম্বরও পেয়ে যাব।’
ব্যাস! তার পর থেকেই ছোট ছোট দল গড়ে পালা করে রাতপাহারা দিচ্ছে প্রান্তিকপাড়া। কারও হাতে লাঠি, কারও হাতে টর্চ। বিপদ বুঝলে বা সন্দেহজনক কিছু দেখলে কেউ বাজিয়ে দিচ্ছেন বাঁশি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সপ্তাহ দুয়েক ধরে এই নৈশ অভিযানের পরে চুরির দাপট কিছুটা হলেও কমেছে।
রাতবিরেতে পাড়ার নতুন মুখ দেখলেই শুরু হচ্ছে প্রশ্নবাণ। ঠিকঠাক জবাব মিললে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। না হলে সটান থানায় ফোন। রাতপাহারা দেওয়া দলের প্রবীণরা জানাচ্ছেন, দলের সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কেউ নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। কাউকে হেনস্থা করা বা অপমান করাও তাঁদের উদ্দেশ্য নয়। রাতে তাঁরা সতর্ক থাকছেন। প্রয়োজনে ফোন করছেন পুলিশকে। জেলার এসপি মুকেশ কুমার বলছেন, “ওই এলাকায় চুরির অভিযোগে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাতে পুলিশি টহলদারি আরও বাড়ানো হয়েছে।’’
প্রান্তিকপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় চিকিৎসক আবুল কালাম আজাদ, মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতের সদস্য পিয়ারুল ইসলাম, হোমিওপ্যাথ হিলাল বিশ্বাসেরা বলছেন, ‘‘নিজেদের পাড়ার স্বার্থেই পথে নেমে রাত জাগছি।’’ রাতে চুরি না হয় কমেছে। কিন্তু ছিনতাই? সকাল-সাঁঝে বাইরে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন অনেকে। কারণ, সম্প্রতি দ্রত গতির মোটরবাইক ছিনিয়ে নিয়েছএ বেশ কয়েকটি সোনার হার। প্রান্তিকপাড়ার রোজি ইসলাম বলছেন, ‘‘পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে বাইক গেলেই ভয় লাগছে।’’
এ ভয় কাটবে কবে, অপেক্ষায় প্রান্তিকপাড়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy