টোটো-রাজ। কৃষ্ণনগর শহরে এই চিত্র নিত্যদিনের। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
আরও কত দুর্ঘটনা, কত মৃত্যু হলে টনক নড়বে প্রশাসনের?
বৃহস্পতিবারের সেই দৃশ্য দেখার পরে প্রশ্নটা তুলছেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দারা। টোটোর ধাক্কায় লোকটা ছিটকে পড়েন ট্রাকের গায়ে। আর তীব্র গতিতে শহরের রাস্তা দিয়ে লোকটাকে নিয়ে ছুটে চলেছে ট্রাক। ভীমপুরের গোবরাপোতার বাসিন্দা মন্টু পালকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁকে বাঁচানো যায়নি।
শুক্রবার থেকে অবশ্য শহরের বিভিন্ন এলাকায় টোটো নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। যা দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, ‘‘যখনই কোনও দুর্ঘটনা হয়, কিছু দিন অতিসক্রিয় হয় পুলিশ। তারপর যে কে সেই।’’ জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য এই ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিচ্ছেন।
অথচ শহরে টোটোর দৌরাত্ম্য আজকের নয়। বেশ কয়েক মাস ধরেই শহরে টোটোর উপরে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই স্থানীয় পুরসভা ও প্রশাসনের। সেই সুযোগ নিয়ে এই ক’মাসে শহরের বুকে হু হু করে বেড়ে গিয়েছে টোটোর সংখ্যা। পুরপ্রধানের হিসাব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে শহরের বুকে প্রায় পাঁচ হাজার টোটো চলছে।
এমনিতেই প্রাচীন এই জেলা সদরে রাস্তাঘাট অপেক্ষাকৃত সরু ও অপরিকল্পিত ভাবে তৈরি। বেড়ে যাওয়া অন্য যানবাহনের পাশাপাশি এই বিপুল সংখ্যক টোটো সামাল দিতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে শহরের। এমনিতে শহরের গতি যেমন শ্লথ হয়ে পড়েছে তেমনই টোটো চালকদের দৌরাত্ম্যে শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কখনও ভাড়া মেটাতে না পাড়ায় অসুস্থ বৃদ্ধার হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে ওষুধের প্যাকেট তো কখনও টোটোর ধাক্কায় রাস্তায় হুমড়ে খেয়ে পড়তে হচ্ছে কোনও শিশুকে। আবার কখনও বা দাবি করা হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। না দিলে হেনস্থার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। এসব ছাপিয়ে গিয়েছে বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনা।
কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? টোটো চালকদের একাংশের দাবি, প্রশিক্ষণ না নিয়ে যে কেউ টোটো কিনে রাস্তার নেমে পড়ছেন। তাঁরা ট্রাফিক আইন জানেন না, মেনে চলারও প্রশ্ন নেই। আর সেই কারণেই এমন বিপত্তি। কয়েক মাস আগেও টোটো নিয়ন্ত্রণ করত কৃষ্ণনগর পুরসভা। পুরপ্রধান তৃণমূলের অসীম সাহা বলেন, “দলেরই দু’একজন কাউন্সিলার আমাদের এই নিয়ন্ত্রণের বিরোধিতা করেছিলেন। তৎকালীন জেলাশাসক পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন, পুরসভা টোটো নিয়ন্ত্রণ করবে না।’’ সেই থেকে টোটো নিয়ে চুপ পুরসভা। আবার প্রশাসনের তরফেও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে অভিযোগ। মন্টু পালের ছেলে শান্তনু পাল বলছেন, “সবই হয়তো হবে। কিন্তু আমার বাবা কি আর ফিরবেন? সে দায় কে নেবে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy