প্রতীকী ছবি।
একেই বলে সর্ষের মধ্যে ভূত। হাঁসখালির এক সমবায় সমিতির ম্যানেজারের বিরুদ্ধে এ বার চাষিদের থেকে কম দামে ধান কিনে স্ত্রী-র নামে সরকারের কাছে সরকারি মূল্যে বিক্রি করার অভিযোগ উঠল।
সমিতির আরও কয়েক জন এই ঘটনায় জড়িত বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, ঠিক ফড়েরা যে ভাবে কাজ করে সে ভাবেই কাজ করছেন ওই ম্যানেজার ও সমবায় সমিতির কয়েক জন কর্মী।
অথচ, ওই সমবাস সমিতির পরিচালন সমিতির সম্পাদক কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক তৃণমূলের সত্যজিৎ বিশ্বাস। ধান কেনায় ফড়ে রাজ বন্ধ করতে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে তাঁকেই সব চেয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছিল। তা ছাড়া, নদিয়ার অন্যতম বড় সমবায় সমিতি হল হাঁসখালির গাজনা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি। এর একাধিক শাখা আছে। তার একটি হল তারকনগর শাখা। সেই শাখার ম্যানাজার গাজনা পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা উজ্জ্বল বিশ্বাস। তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ, তিনি নিজে চাষ করেন না। অথচ ১১ জানুয়ারি তাঁর স্ত্রীর নামে ২০ বস্তা ধান বিক্রি করা হয়েছে। বিষয়টি প্রথমে নজরে আসে সমবায়ের কর্মীদের। সমবায় সূত্রের খবর, প্রথমে ভয়ে তাঁরা মুখ খুলতে সাহস পাননি। পরে হাঁসখালির ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের কাছে লিখিত ভাবে জানান। জানানো হয় সমবায় সমিতি কর্তৃপক্ষকেও। কিন্তু কোনও তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও পদক্ষেপই করা হয়নি। ফলে অনেকেই মনে করছেন। গোটা বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, উজ্জ্বল বিশ্বাসের নিজস্ব জমি নেই। তিনি চাষও করেন না। তা হলে তাঁর স্ত্রীর নামে ২০ বস্তা ধান এল কী করে? তা ছাড়া, তাঁর নিজের জমির ধান হলে তা নিজের নামে বিক্রি না-করে স্ত্রী-র নামে বিক্রি করলেন কেন? এর যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি উজ্জ্বলবাবু। তিনি অবশ্য দাবি করেন, “আমার নিজের জমি নেই। কিন্তু আমি অন্যের জমিতে চাষ করি। এটা সেই জমির ধান।” কার জমিতে তিনি ভাগচাষ করেন? তিনি দাবি করেন, প্রতিবেশী মুকুল বিশ্বাসের তিন বিঘা জমিতে তিনি ভাগ চাষ করেছেন। মুকুল বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আবার বলেন, “আমার সাড়ে তিন বিঘা জমি আছে। সেই জমিতে ভাগচাষ করে উজ্জ্বল বিশ্বাস। তবে তিনি নিজে মাঠে যান না। তাঁর পরিবর্তে আমিই চাষ করি।” জমি অন্যের, তাতে চাষও করেন অন্য লোক। তা হলে সেই জমির ধান কী করে উজ্জ্বল বিশ্বাসের হয় তার কোনও জবাব উজ্জ্বলবাবু দেননি। শুধু বলেছেন,“আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে।” তবে ওই সমবায় সমিতির মূল শাখার ম্যানাজার রঘুনাথ ঘোষ বলেন, “আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি যে, এর মধ্যে কোনও অনিয়ম হয়নি।”
গত মাসে ফড়ে রাজ বন্ধ করার জন্য সব জেলার জেলাশাসকদের নবান্নে ডেকে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকেও তিনি বারবার করে সাবধান করে গিয়েছেন। চার পরেই নদিয়ায় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সেখান ফড়েরাজের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হয়েছিলেন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। তাঁর সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠার প্রসঙ্গে সত্যজিৎবাবু বলেন,“উজ্জ্বল বিশ্বাস নিজে চাষ করেন বলে জানি। নিজে ম্যানেজার বলে হয়ত স্ত্রীর নামে ধান বিক্রি করেছেন।” তাঁর আরও বক্তব্য, “তবে আরও ভাল করে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” বিডিও উৎপল পাস্তা বলছেন, “অভিযোগের কপি আমি এখনও হাতে পাইনি। পেলে তদন্ত করে করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy