প্রতীকী ছবি।
লালশালু জড়ানো পুথি, দোয়াত, খাগের কলম জলচৌকির উপর রাখা। সামনে আসনপিঁড়ি হয়ে বসে প্রদীপের আলোয় চলছে পড়াশুনো। কিংবা কোনও গাছতলায় গুরুকে গোল করে ঘিরে বসে ধুতি-চাদর পড়া শিষ্যের দল নিচ্ছেন বেদান্ত, ন্যায় কিংবা স্মৃতির পাঠ। নবদ্বীপের চতুষ্পাঠী বা টোলে সংস্কৃত শিক্ষার কথা উঠলেই চোখের সামনে এমনই একটা ছবি ভেসে ওঠে।
সময় যত দিয়েছে ছবিটা একটু একটু বদলে গিয়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নবদ্বীপের সেই ঐতিহ্যবাহী টোল শিক্ষা ব্যবস্থায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। পুথির পাট চুকিয়ে টোলেও এসেছে কম্পিউটার। এ বারই প্রথম চতুষ্পাঠী স্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষা শাস্ত্রী (স্নাতক) বা আচার্য (স্নাতকোত্তর) পরীক্ষার ফর্ম ফিলআপ শুরু হয়েছে অনলাইনে। আর এসবই ঘটেছে নবদ্বীপের ভারতী চতুষ্পাঠী সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়।
এখনও নবদ্বীপের সংস্কৃত চর্চার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকে যে কয়েকটি সংস্থা এখনও বহন করে চলেছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম কেন্দ্র সরকারের মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন স্বশাসিত সংস্থা তথা ‘ডিমড ইউনিভার্সিটি’ রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থানের অনুমোদিত নবদ্বীপের ভারতী চতুষ্পাঠী।
নবদ্বীপের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত রাজেন্দ্রচন্দ্র তর্কতীর্থ উদ্যোগী হয়ে ১৯৭৪ সালে স্থাপন করেন ভারতী চতুষ্পাঠী নামে এক আদর্শ সংস্কৃত শিক্ষা কেন্দ্র। প্রথমে সেখানে টোল শিক্ষা প্রচলিত ছিল। কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে দিয়ে টানা দু’দশক কাজ করার পর ১৯৯৪ সালে প্রথম মিলল সরকারি স্বীকৃতি। ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃত সংস্থানের অনুমোদন পেয়ে শিক্ষাসূচীতে লাগল আধুনিকতার ছোঁয়া। তৈরি হল ঝাঁ চকচকে ত্রিতল ভবন। হাতেগোনা কয়েক জন আশ্রমবাসীকে নিয়ে একদা চালু হওয়া ভারতী চতুষ্পাঠী এখন ডিমড ইউনিভার্সিটির অংশ। প্রায় সাতশো ছাত্রছাত্রী প্রাক শাস্ত্রী (উচ্চ মাধ্যমিক), শাস্ত্রী (অনার্স) এবং আচার্য (স্নাতকোত্তর) স্তরে পাঠরত। সংস্কৃতের পাশাপাশি পড়ানো হয় বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো আধুনিক বিষয়গুলিও।
এ বার সেই ভারতী চতুষ্পাঠীতে শুরু হল অনলাইনে পরীক্ষার ফর্ম ফিল-আপ। কলেজের অধ্যক্ষ বুদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গোটা ব্যাপারটা আধুনিক করতে না পারলে ছেলেমেয়েরা পিছিয়ে পড়বে। তাই এ বার থেকে ভর্তির ফর্ম ফিলআপ যেমন অনলাইনে করা হচ্ছে তেমনিই পাঠ্যক্রমকে সিমেস্টারে ভাগ করে দিয়েছি। প্রযুক্তির হাত ধরলে তবেই বাঁচবে ঐতিহ্য।”
রজতজয়ন্তী পার করে আসা ভারতী চতুষ্পাঠীতে প্রায় সাড়ে ছয়শো পড়ুয়া রয়েছেন। পড়ুয়ারা সকলেই সংস্কৃতে অনার্স এবং এমএ পড়ছেন। গত ৩ অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছিল বিভিন্ন পরীক্ষার অনলাইন ফর্ম ফিলআপ। ১৩ অক্টোবর শেষ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy