Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

স্কুলে কান্না, বিয়ে বন্ধ হল ছাত্রীর

প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও ছাত্রীটি ধাতস্থ হলে তার কাছ থেকে গোটা বিষয়টি শোনেন শান্তিপুরের তন্তুবায় সঙ্ঘ উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকেরা। তার পরে তাঁরা সেই বিয়ে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। সঙ্গে ছিল কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা।

চলছে বাড়ির লোকজনকে বোঝানো। নিজস্ব চিত্র

চলছে বাড়ির লোকজনকে বোঝানো। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শান্তিপুর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:০৪
Share: Save:

স্কুলে তখন ব্যস্ত সময়, তোড়জোড় চলছে ফর্ম ফিল আপের। এমন সময় শিক্ষকদের বসার ঘরে ঢুকে কেঁদেই ফেলল এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। কাঁদতে কাঁদতেই কোনও রকমে সে বলল, ‘‘স্যর, বাড়ি থেকে আমার বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, আমি এখনও পড়াশোনা করতে চাই।’’

প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও ছাত্রীটি ধাতস্থ হলে তার কাছ থেকে গোটা বিষয়টি শোনেন শান্তিপুরের তন্তুবায় সঙ্ঘ উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকেরা। তার পরে তাঁরা সেই বিয়ে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। সঙ্গে ছিল কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা। শেষ পর্যন্ত নাবালিকা ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে তার পরিবারকে বুঝিয়ে নিরস্ত করেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬ বছর বয়সি ওই ছাত্রীর নাম পল্লবী রায়। সে শান্তিপুর পুর এলাকার মহাপ্রভু পাড়ার বাসিন্দা। তার বাবা প্রদীপ রায় পেশায় তাঁত শিল্পী। প্রদীপের তিন মেয়ের মধ্যে পল্লবী মেজ। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে আগেই। ছোট মেয়ে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। সংসারে অভাব রয়েছে। আর্থিক অনটনের কারণেই পল্লবীর বিয়ে ঠিক করেছিল তার পরিবার। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে আগামী বছরের মার্চ মাসের দিকে নবদ্বীপে তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিয়ে করতে রাজি নয় পল্লবী। তবে পরিবারের সামনে সে ভাবে মুখ খুলতে পারেনি সে। তাই পরে বিষয়টি স্কুলের শিক্ষকদের এবং সহপাঠীদের জানায় সে।

এর পরেই আসরে নামে পল্লবীর স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা। তারা স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে শনিবার পৌঁছে যায় পল্লবীর বাড়িতে। পল্লবীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। নাবালিকা বিয়ের কুফল সম্পর্কে তাঁদের বোঝানো হয়। দীর্ঘক্ষণ বোঝানোর পরে অবশ্য তাঁরা রাজি হন। জানিয়ে দেন, নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেবেন না। মেয়েকে পড়াবেন। পল্লবী বলে, “বাড়িতে অভাব রয়েছে। সেই কারণেই বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছিলেন। আমার এখনই বিয়ের ইচ্ছা ছিল না। আমি পড়াশোনা করতে চাই।” পল্লবীর বাবা বলেন, “আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। ভাল পাত্র পেয়েছিলাম নবদ্বীপে, তাই বিয়ে ঠিক করেছিলাম। কিছু মিষ্টির অর্ডার দেওয়া হয়ে গিয়েছিল। এখন তা বাতিল করতে হবে।’’ তবে পাশাপাশি তিনি জানান, ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। মেয়েকে পড়াবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child marriage Shantipur Teachers Students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE