‘সকাল-সন্ধে চুটিয়ে প্রাইভেট পড়াও, আর স্কুলে গিয়ে বিশ্রাম নাও’—এই নীতি অনুসরণ করেই বহু সরকারি স্কুল শিক্ষক বহাল তবিয়তে রয়েছেন বলে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন চাকদহের গৃহশিক্ষকদের একটা বড় অংশ।
অভিযোগকারীরা কোনও স্কুলে চাকরি করেন না। প্রাইভেট টিউশন করেই এঁদের রোজগার। অতি সম্প্রতি এই গৃহশিক্ষকরা একত্রিত হয়ে ‘চাকদহ ব্লক ওয়েল ফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করেছেন। মাত্র কয়েক দিনে ওই সংগঠনের সদস্য সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছে। চাকদহ শহর ছাড়াও ওই ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের গৃহশিক্ষকরা এর সদস্য হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এর সদস্য সংখ্যা বাড়ছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। সোমবার সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারি আইনকে বাস্তবায়িত করার দাবিতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করেছেন, নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও শুধু নদিয়া নয়, গোটা রাজ্যে সরকারি শিক্ষকদের অনেকেই চুটিয়ে টিউশন করছেন। এতে তাঁদের মতো গৃহশিক্ষকদের রোজগারে টান পড়ছে।
প্রসঙ্গত, সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকার-পোষিত স্কুলের কোনও শিক্ষক আইনত প্রাইভেট টিউশন করতে পারেন না। কিন্তু অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা করেন না বলে অভিযোগ। বাম আমলে এক বার সরকার এ ব্যাপারে কড়া হয়েছিল। বিভিন্ন শিক্ষকের বাড়িতে, কোচিংয়ে আচমকা অভিযানও চালানো হয়েছিল। কিন্তু তার পর তাতে ভাটা পড়ে। ভোটব্যাঙ্কের কথা ভেবে এর পর কোনও রাজনৈতিক দলই এঁদের ঘাঁটাননি বলে অভিযোগ। চাকদহের গৃহশিক্ষকদের আন্দোলনে সেই অভিযোগ আবার নতুন করে সামনে এল। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “সরকারি শিক্ষকদের কেউ ২৫ বছর, আবার কেউ ১৫ বছর, কেউ আবার ১০ বছর ধরে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে না-পড়লে নম্বর পাওয়া যায় না। এঁরা সাধারণ গৃহশিক্ষকদের পড়ানো নিয়ে কটাক্ষ করেন এবং আমাদের ছাত্রছাত্রী ভাঙিয়ে নেন।’’ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক অনিন্দকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কোনও শিক্ষক প্রাইভেট পড়াতে পারেন না। এ ধরনের কোন অভিযোগ এলে, তা তদন্ত করে দেখা হবে। প্রয়োজনে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি বলেন, “বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষকের বিষয়টি দেখা উচিত,তার বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষক এ সব করছেন কিনা, বা ছাত্রদের উপর তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন কিনা। শিক্ষার কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা।”
যদিও সরকারি শিক্ষকদের একাংশের দাবি, তাঁরা পড়ান না বা তাঁদের কাছে প্রাইভেট পড়ানোর জন্য ছাত্রছাত্রীদের চাপ দেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘কিছু এলাকায় ভাল শিক্ষক না থাকার জন্য এক শ্রেণির অভিভাবক ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। তাই বাধ্য হয়তো দু- চার জনকে পড়া দেখিয়ে দিতে হয়।’’
তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি অনূপ ভদ্র বলেন, “সংগঠনের সঙ্গে যে সব শিক্ষকরা যুক্ত রয়েছেন তাঁদের আবার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও রকম প্রাইভেট পড়ানো যাবে না।’’ সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র জেলা সভাপতি সুধন্য সরকারের কথায়, “আমাদের সংগঠনের কোনও সদস্য কর্মরত অবস্থায় প্রাইভেট পড়ান না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy