Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
aadhaar card

নাম হারিয়েছে শেখপাড়া

প্রশাসনের কাছে বার পাঁচেক দরবার করেও লাভ হয়নি। ফর্ম ৮ পূরণ করাও প্রায় দুষ্কর হয়ে উঠেছে তাঁদের।

আধারে ভুল। নিজস্ব চিত্র

আধারে ভুল। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০১:৩৯
Share: Save:

নাম যে নিছক পরিচয়ের প্রথম ধাপ নয়, তার সঙ্গে সামাজিক লজ্জা-ভয়-সম্মানও জড়িয়ে রয়েছে, রমনা শেখপাড়ায় এক বার পা না রাখলে তা বোধহয় টের পাওয়া যেত না।

ভোটার কার্ডে নাম বিভ্রান্তির ফলে ডোমকল পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়ার সেই শান্ত, তেঁতুল-ছায়া চেহারাটাই কেমন ঘেঁটে গিয়েছে যেন! কারণ, ভোটার কার্ডে অধিকাংশেরই ধাম হয়ে উঠেছে গরিবপুর। যার ফলে, এলাকার ১০২ দু’জন ভোটার পড়েছেন তীব্র সংশয়ে। ধামের এমন অযাচিত এবং রাতারাতি বদল ঘটে যাওয়ায় জুয়েল শেখকে ফিরে আসতে হয়েছে পাসপোর্ট অফিস থেকে। জুয়েল একা নন, সেই তালিকায় শেখপাড়ার অন্তত জনা পঁচিশ পরিযায়ী শ্রমিকও। একই ফাঁপরে পড়েছেন সকলে। সরকারি বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে ক্রমাগত ধাক্কা খেতে হচ্ছে তাঁদের। চার বছর আগে নতুন ভোটারকার্ড সংশোধনের পর নাম এবং ধাম দু’টোই আমূল ‘সংশোধিত’ হয়ে গিয়েছে তাঁদের। প্রশাসনের কাছে বার পাঁচেক দরবার করেও লাভ হয়নি। ফর্ম ৮ পূরণ করাও প্রায় দুষ্কর হয়ে উঠেছে তাঁদের। ডোমকলের বিডিও পার্থ মণ্ডল বলছেন, ‘‘সমস্যাটা গুরুতর, আমি ওঁদের ফর্ম ৮ পূরণ করে জমা দিতে বলেছি। উপায় কিছু একটা হবেই।’’ ভোটার কার্ডের এই বিচিত্র ভুল নিয়ে আগে তেমন মাথা ঘামাননি শেখপাড়ার মানুষ। কিন্তু নয়া নাগরিকত্ব আইন পাশ হওয়ার পরে এবং এনআরসি’র জুজুতে এখন গা দিয়ে ঘাম ঝরছে তাঁদের। শেখপাড়া জুড়ে তাই হিড়িক পড়ে গিয়েছে সংশোধনের। গ্রামের আব্দুল লতিফ তাই কাঁপা কাঁপা গলায় বলছেন, ‘‘যা ভুল করে বসে আছে তাতে তো ডিটেনশন ক্যাম্প ছাড়া গতি নেই মনে হচ্ছে!’’ স্থানীয় বাসিন্দা তারিক সলমন বলছেন, ‘‘প্রশাসন তো ফর্ম ৮ পূরণ করার কথা বলেই খালাস। কিন্তু গত কয়েক মাসে অনেকেই সেই ফর্ম পূরণ করেও সুরাহা পাননি। সেই একই ভুল নিয়েই ফিরেছে সংশোধিত ভোটারকার্ড।’’ তাসিকুল ইসলামের দাবি, ‘‘আমার বউ সুলেখা বিবির ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভোটারকার্ড ভুল সংশোধনের জন্য ফর্ম ৮ পূরণ করে আবেদন করেছিলাম। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে নতুন করে ভোটার কার্ড হাতে পেয়েছি, তাতে সেই একই ভুল। উল্টে সরকার পাড়ার বদলে এসেছে, বাড়ি গরিবপুর।’’ পড়াশোনা শেষ করে কোনও কাজ মেলেনি সরকারপাড়ার জুয়েল শেখের। বছরখানেক আগে ঠিক করেছিলেন আরবমুলুকে পাড়ি দেবেন। আর তা করতে গিয়ে প্রথমে যেটা দরকার তা পাসপোর্ট। সেটা করতে গিয়েই ভোটার কার্ডের ভুল ঠিকানা নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে তাঁকে। জুয়েলের দাবি, শেষ পর্যন্ত ওই ভুল ঠিকানার জন্যই পাসপোর্ট হয়নি তাঁর। বাধ্য হয়ে তাই ভিন রাজ্যে কাজে গিয়েছেন তিনি। গফফর শেখকে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার একটা ঘর পেতে গিয়ে কেবলমাত্র পাড়ার নাম ভুল থাকার জন্যই নিয়মিত দৌড়তে হচ্ছে বহরমপুরে। তা হলে উপায়, মাথা চুলকে প্রশাসনের এক তাবড় কর্তা বলছেন, ‘‘নামের গেরোয় গোটা পাড়াটা এখন জহন্নামে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

AADHAAR Card Voter Card Correction Sekhpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE